মাগুরা সদরের কাশিনাথপুর এলাকার তৈয়েব আলীর (৭৫) ইচ্ছা ছিলো, মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ যেন কবর দেওয়া না হয়। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ নিজ ঘরের ভেতর রেখে ঘরটির দরজা বন্ধ করে রাখতে বলেছিলেন তিনি। এই শেষ ইচ্ছা পরিবারের লোকজনকে মৃত্যুর আগে জানিয়ে যান তৈয়েব। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর তাঁকে কবর না দিয়ে ওই ঘরেই রাখে স্বজনেরা। এই ঘটনায় এলাকার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ক্ষোভরে সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে কবর দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা।
মৃত তৈয়ব আলীর স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, তৈয়েব আলীর দু'টি কিডনিই নষ্ট ছিলো। একমাস বাড়িতে শয্যাশায়ী হওয়ার পর চলতি মাসের ২২ তারিখ নিজ গৃহে মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছা অনুসারে পরিবারের লোকেরা তাঁর থাকার সেই পাকা ঘরে মৃতদেহটি রেখে বাইরে থেকে ঘরের একমাত্র দরজাটি প্লাস্টার করে আটকে দেন। এই ঘটনার আট দিন পর সোমবার (৩০ আগস্ট) স্থানীয়রা জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুসারে তাঁর কবর দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন তাঁরা। সোমবার দুপুরে ঘরটি ভেঙে ফেলতে স্থানীয় গ্রাম্য মাতবররা নানান সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
জাভেদ মোল্লা নামে মৃতদের এক প্রতিবেশী জানান, তৈয়েব আলী বিয়ে করেননি। তার বাবার নাম মৃত আরজু কারিকর। তিনি ইসলামী বেশভূষায় চলতেন। নিয়মিত নামাজও পড়তেন। কোনো এক পীরের অনুসারী ছিলেন। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতেন। তখন তাঁরা ঘর থেকে বের হতেন না। বছরব্যাপী দেশের নানান প্রান্তে পীর আওলীয়ার মাজারে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। মাঝে মধ্যে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিছু মানুষ তাঁর সংগে আসতেন বলে জানতে পারেন তাঁরা। সেই লোকজনই বাড়িটি ঘিরে মাজার তৈরির পায়তারা করছেন। এগুলোকে ইসলাম বিরোধী কাজ দাবি করে তিনি বলেন, এলাকাবাসী এটি চায় না।
স্থানীয় সজল হোসেন জানান, শুনেছি ২২ তারিখ তৈয়ব আলী মারা গেছেন। এরপর তার জানাজায় অংশ নেন তাঁর কিছু আত্মীয়-স্বজন এবং ভক্তরা। ভক্তদের কাউকে আমরা চিনি না। জানাজা শেষে তার মৃতদেহ ঘরেই আটকে রাখা হয়। এর পর তাঁর কথিত ভক্তরা ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে দরজাটি বন্ধ করে দেন। ওই ঘরে কোনো জানালা রাখা হয়নি তাই আমরা কেউ বলতে পারছি না ঘরের ভেতরে আসলে কী কী আছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, তৈয়েব আলীর ভাই-বোন যারা ছিলেন তাঁরা সবাই নাকি তাঁর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে তাঁর ভক্তদের সংগে এই কাজে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
কাশিনাথপুর মাগুরা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আল আসাদ মেলিন জানান, গতকাল বিষয়টি শুনেছেন তিনি। মৃতদেহ ঘরে রেখে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। তার ওই ঘরকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ এটাকে মাজার হিসেবে গড়তে চাইছেন। এছাড়া ওই ঘরকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন যাবৎ তাঁর কথিত ভক্তদের কাণ্ডকারখানা দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত। তাই ঘরটি ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনিও। মৃতদেহটি ইসলামী নিয়ম অনুসারে কবর দেওয়ার জন্য স্থানীয় আলেম সমাজসহ প্রতিবেশীদের ডাকে এখানে এসেছেন বলে জানান স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি। এই বিষয়ে তৈয়েব আলীর স্বজনদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।