বরগুনার আমতলীতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে হতদরিদ্র গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া গৃহ বরাদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (৫ জুলাই) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ের উপসচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানাগেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধিনে বরগুনার আমতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৩৫০টি দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহ বরাদ্ধ দেয়া হয়। এই ঘরগুলো উপজেলার অসহায়, গৃহহীন ও দুঃস্থ ভূমিহীন পরিবারগুলোকে যাচাই- বাচাই করে তাদের মধ্যে বরাদ্ধ দেওয়ার কথা।
কিন্তু উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে বরাদ্ধ দেয়া ১১০টি গৃহের মধ্যে উপজেলায় ওই প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান তার অফিস সহকারী এনামুল হক বাদশার মাধ্যমে উৎকোচের বিনিময়ে অসহায়, গৃহহীন ও দুঃস্থ ভূমিহীন পরিবারকে বাদ দিয়ে এনামুল হক বাদশার বড়লোক আতœীয়- স্বজনদের মাঝে ১০টি গৃহসহ যারা গৃহ পাওয়ার উপযূক্ত নয় যাদের ভূমি আছে এমন ব্যক্তিদের মাঝে বরাদ্ধ দেয়া হয়।
একই বাড়ীতে একের অধিক গৃহও বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ওই সময় এই অনিয়নের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতা বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবরে উৎকোচ নিয়ে গৃহ বরাদ্ধের অভিযোগ এনে ইউএনও ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যা নিয়ে ওই সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যার। পরে বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটেটকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়।
তিনি সরেজমিনে গৃহ বরাদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় অফিস সহকারী এনামুল হক বাদশাকে অভিযুক্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পরেই অফিস সহকারী এনামূল হক বাদশাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পরে বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিনে তদন্ত করতে আমতলী আসেন। তারাও গুলিশাখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্মানাধীন গৃহগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে নানা অনিয়ম ও নীতিমালা বর্হিভূত কর্মকান্ডের প্রমাণ পায়।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন মুঠোফোনে জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকৃত ভূমিহীনকে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প। কিন্তু ওই গৃহ নির্মাণ ও বরাদ্ধকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথায় অনিয়মের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এর সঙ্গে জড়িত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী আমতলী উপজেলায় নির্মিত গৃহের গুণগত মান ঠিক হয়নি বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সেসঙ্গে ভূমিহীনদের ঘর ভূমি মালিকদের নামে বরাদ্দ, ঘর বরাদ্দে অনিয়ম এবং ঘর নির্মাণ নিয়ে নীতিমালা বর্হিভূত কর্মকান্ড করার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানের শাস্তিমূলক বদলী ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অনিয়ম করলে প্রশাসনের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।