বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে সেন্টমার্টিন সৈকত!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমান উল্লাহ কবির, উপজেলা প্রতিনিধি টেকনাফ (কক্সবাজার)
প্রকাশিত: বুধবার ১৩ই জানুয়ারী ২০২১ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে সেন্টমার্টিন সৈকত!

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ টেকনাফের সেন্টমার্টিন সৈকতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণসহ পর্যটকদের মধ্যে।সকালে মাদ্রাসায় পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মক্তবে যাচ্ছেনা, মুসল্লীরা ফজর ও এশার


নামাজ বাড়িতে আদায় করছেন বেওয়ারিশ কুকুরের ভয়ে এবং আতঙ্কে।  এছাড়াও পরিবেশকে মারাত্মক ভাবে দূষিত করছে ওই কুকুরগুলো। পর্যটকসহ স্থানীয়দের  উম্মুক্তভাবে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়ছে।এমন অভিযোগ দ্বীপের বাসিন্দা ও দ্বীপে আগত পর্যটকদের।

বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় সৈকতের চারিপাশে শত শত কুকুরের ঘুরাঘুরি ও ঝগড়াতে রীতিমতো আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ওই কুকুরগুলো ডিম দিতে আসা কচ্ছপদেরও শিকারে পরিণত করছে। ফলে যে কোন সময় বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ, পর্যটক ও সৈকতে ডিম দিতে আসা কচ্ছপগুলো।


১১-১২ জানুয়ারি সোমবার ও মঙ্গলবার সকাল সন্ধ্যায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শতাধিক কুকুর দলবদ্ধ হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এসব কুকুরের সাথে কুকুর ছানাও চোখে পড়ার মতো। এসময় পর্যটকরা হাঁটাহাঁটি করছেন। কিন্তু কুকুরের ভয়ে নারী-পুরুষ পর্যটকরা আতংকে ও সতর্কে পা চালাচ্ছেন। অনেকে ভয়ে ঘুরাঘুরি না করে সৈকত


ছেড়ে রুমে চলে যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভয়ংকর রূপ ধারন করে এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ এবং সন্ধ্যা বেলায় যারা ঘুরতে অলিগলি ও সৈকতে পা রাখে তাদের দেখে কুকুরগুলো পর্যটকদের দৌড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত পর্যটকরা বাধ্য হয়ে সৈকত ছেড়ে রুমে চলে যেতে হয়। ফলে তাদের আনন্দের ভ্রমনকে প্রতিহত করে ওই বেওয়ারিশ কুকুরের দল।


দক্ষিন-পশ্চিম সৈকতের চেয়ে উত্তর-পূর্ব সৈকতে কুকুরের দল বেশী এবং চোখে পড়ার মতো।প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের অলিগলি ও সৈকত জুড়ে সাত হাজারের বেশি কুকুর রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।


সেন্টমাটিন দ্বীপটিতে ১০ হাজারের মত জন সাধারণের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত লোকজনসহ বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস।এছাড়াও প্রতিদিন দেশ বিদেশের আড়াই হাজারের অধিক পর্যটক ভ্রমন করে থাকেন।কিন্তু দ্বীপটিতে সাত হাজারের অধিক বেওয়ারিশ কুকুরের আনাগোনায় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের


স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত করছে। এই কুকুরের উপদ্রবের কারণে বর্তমানে দ্বীপবাসীকেও ভাবিয়ে তুলেছেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসকারী সংবাদকর্মী নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, বর্তমানে সেন্টমার্টিনে জনসংখ্যার চেয়ে কুকুরের সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে। শিগগিরই কুকুর নিধন না হলে দ্বীপের জনসাধারণের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ক্ষতির সম্মুখীন হবে পর্যটন ব্যবসা।


সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, পরিবেশগত কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সেন্টমার্টিনে কুকুরের প্রজনন সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে সেন্টমাটিন দ্বীপে কুকুর বংশ বিস্তার হচ্ছে উদ্বেগজনকভাবে। পর্যটন মৌসুমে সেন্টমাটিন দ্বীপে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। 


এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলো বিভিন্ন ডাস্টবিন হতে পঁচা আবর্জনা, পলিথিন এনে সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবেশকে দূষিত করছে। কুকুরের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সকালে মক্তবে যাচ্ছেনা। ফজর ও এশার নামাজ প্রায় মুসল্লী বাড়িতে আদায় করছেন। প্রায় ৭


হাজারের মতো কুকুর থাকতে পারে সেন্টমার্টিনে।নিরাপদ ভ্রমণ ও দ্বীপের বাসিন্দা সহজ যাতায়ত নিশ্চিতে বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিধন জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।