মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই মানুষের সব কিছুই হবে শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কাছে এটাই ইচ্ছা রাখেন যে, আমরা যেন সব ধরণের সামাজিক কদাচার আর কুপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল আল্লাহ ও রাসুলের আদেশসমূহের ওপর আমল করি। আল্লাহ বলেন-অতপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৫০)
এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে। আমরা যেন নিজ কামনা-বাসনার অনুসরণ না করি। এছাড়া যারা আল্লাহ ও রাসুলের অনুসরণ না করে অন্য কিছুর অনুসরণ করবে তারা আল্লাহর হেদায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে। আর এমনটি যদি কেউ করে তবে সে হবে জালেমদের অন্তর্ভূক্ত।
তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাইলেই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে গিয়ে নতুন কোনো কিছু গ্রহণ বা সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি না। যদিও বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ রয়েছে আর এটা থাকবে, আমাদের কাজ হলো প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অন্যদের সামনে তুলে ধরা। যারা ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত তাদেরকেও আমরা ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামের পতাকা তলে আনার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের ওপর অন্যায় আচরণ বা বাড়াবাড়ি করার শিক্ষা ধর্মে নেই।
আল্লাহপাক সবাইকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, ধর্ম নিয়ে জোর-জবরদস্তির কোনো শিক্ষা আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে দেননি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করে ভাল মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। যে ভাল পথের অন্বেষণ করবে সে আল্লাহর পুরস্কার লাভ করবে আর যে মন্দ পথ অবলম্বন করবে সেও তার মন্দের প্রতিফল পাবে। আমরা যদি সব ধরণের মন্দ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি তাহলে আমাদের আবাসস্থল হবে জান্নাত।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষা বিরোধী কোনো কিছু করলে বা ধর্মে নতুন কোনো কিছু সংযোজন করলে তা হবে বিদাআত বা কুসংস্কার। ধর্মে নতুন কোনো কিছু সংযোজন করা ইসলাম বিরোধী কাজ। যারা এ ধরণের কিছু করেন তারা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী হতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়ে এমন কোনো নতুন রীতির সূচনা করে ধর্মের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্কই নেই তবে সেই রীতিনীতি বা আচার-অনুষ্ঠান অগ্রহণীয় ও পরিত্যজ্য।’ (বুখারি)
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উপদেশ দিচ্ছিলেন, (তখন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখ ছিল রক্তিম, কন্ঠস্বর ছিল উঁচু, আর তার উত্তেজনাও বেড়ে গিয়েছিল। এমন লাগছিল যে, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণে অপেক্ষমান। এমন ভয়ই তিনি আমাদের দেখাচ্ছিলেন, তিনি বলেন- ঐ সেনাদল সকাল-সন্ধ্যায় যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণে উদ্যত। তিনি আরও বলেন, আমার আগমন আর ঐ মুহূর্তকালকে এমন কাছাকাছি করা হয়েছে যে,
এটা বলতে বলতেই তিনি শাহাদত অঙ্গুলী এবং সঙ্গের আরেকটি আঙ্গুলকে একত্রে মিলিয়ে দেখালেন। যেভাবে এই দু’টি আঙ্গুল একত্রে মিলে-মিশে আছে। আবার তিনি একথাও বলেন, এবারে আমি তোমাদেরকে বলছি যে, সর্বোত্তম ধর্মীয় উপদেশ বাণী আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ। সর্বনিকৃষ্ট হলো ধর্মে নতুন রীতিনীতির প্রচলন করা আর সেইসব নতুন রীতিনীতি (মানুষকে) ভ্রান্ত পথের দিকে নিয়ে যায়।’ (মুসলিম)
হজরত আমর বিন আওউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের কোনো একটি সুন্নাত এমনভাবে জীবিত রাখল যে, লোকেরা তা অনুশীলন করতে থাকে। এক্ষেত্রে আমলকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পুণ্যের সমপরিমাণ সুন্নাতকে জীবিতকারী সেই ব্যক্তির (আমলনামায়) পুণ্য যোগ হতে থাকবে, আর এতে করে আমলকারী ব্যক্তিগণের কোনো একজনেরও পুণ্যের পরিমাণে কোনো কমতি হবে না। অপর দিকে যে ব্যক্তি কোনো নতুনত্বের সংযোজন ঘটায় আর লোকেরা তা করতে থাকে, তা হলে এর ওপর আমলকারী সবার পাপের ভার তারই ওপর বর্তাবে। আর এতে সেই ব্যক্তিদের স্ব স্ব পাপের দায়ভারে কোনো কমতি হবে না।’ (ইবনে মাজাহ)
হাদিসের এ আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, ধর্মে নতুন কোনো নিয়ম-কানুন প্রচলন করার কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই। তথাপি আমরা দেখতে পাই যে, নিজেকে মুসলমান দাবি করা সত্ত্বেও নানান ভ্রান্ত রীতি-নীতির অনুসরণ করছি। বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কারমূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছি।
বিভিন্ন ধরণের আচার অনুষ্ঠান আমাদের মূলত ধর্ম থেকেই দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় না বরং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকেও বঞ্চিত করে।একজন মুসলমান হিসেবে নিজেকে সব ধরণের নতুন রীতিনীতির অনুসরণ করার পরিবর্তে ইসলামের সুন্দর শিক্ষা অনুশীলন করে অন্যদের দেখানো উচিত। প্রথমে নিজে, তারপর নিজ পরিবারকে এসব কুসংস্কারমূলক নানান অনুষ্ঠানাদি থেকে রক্ষা করতে হবে।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সব ধরণের সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।