মেয়ের প্রতি বিশ্বনবির ভালোবাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২২শে এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
মেয়ের প্রতি বিশ্বনবির ভালোবাসা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ৪ মেয়ে ছিল। যাদের মধ্যে ৩ জনই তাঁর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। বেচে ছিলেন শুধু হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তাঁর প্রতি ছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অগাধ ভালোবাসা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মেয়ে ফাতেমাকে কী পরিমাণ ভালোবাসতেন, হৃদয়ে মমতা পোষণ করতেন তা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনায় ওঠে এসেছে-

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কথা-বার্তায় ফাতেমার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি। সে (ফাতেমা) যখন তাঁর কাছে আসতো, তখন তিনি ওঠে দাঁড়াতেন, তাঁকে স্বাগত জানাতেন, চুমো খেতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাতেন। আবার যখন তিনি (প্রিয় নবি) ফাতেমার কাছে যেতেন তখন সেও ওঠে দাঁড়াতো, তাঁর হাত ধরতো, তাঁকে স্বাগত জানাতো, চুমো খেত এবং নিজের আসনে নিয়ে বসাতো।’ (আদাবুল মুফরাদ)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু নিজ মেয়েকেই আদর করতেন না বরং নিজ নাতনি হজরত উমামাসহ অন্য মেয়ে শিশুদেরও ভালোবাসতেন। নাতি হাসান ও হোসাইনসহ অন্য ছেলে শিশুরাও তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতো না।
‘উমামা যখন শিশু তখন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাকে কাঁধে চড়িয়ে মসজিদে চলে এলেন। এরপর এভাবেই নামাজে দাঁড়ালেন। দাঁড়ানো থেকে যখন রুকুতে যাবেন তখন তাকে নামিয়ে রাখলেন। এরপর (রুকু শেষে) দাঁড়িয়ে আবার তাকে কাঁধে চড়ালেন। এভাবেই তিনি পুরো নামাজ শেষ করলেন।’ (নাসাঈ)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ে শিশুদের লালন-পালনে, তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করার মাধ্যমে তাদের জীবনকে বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। মেয়ে শিশুদের লালন-পালন, ভরণপোষণ ও উত্তম আচরণের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে-

‘যার ৩ কন্যা সন্তান হবে আর সে তাদের আবাসের ব্যবস্থা করবে, তাদের প্রতি মমতা দেখাবে, তাদের দায়িত্ব নেবে তার জন্য জান্নাত সুনিশ্চিত। জিজ্ঞাসা করা হলো হে আল্লাহর রাসুল! যদি (কন্যা) ২ জন হয়? প্রিয় নবি বললেন, ২ জন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবিদের কারো ধারণা- ‘যদি কেউ বলতো একজন হলে? তাহলে প্রিয় নবি বলতেন, একজন হলেও।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

অন্য হাদিসে এসেছে-
‘তোমাদের কারও যদি ৩ মেয়ে কিংবা ৩ বোন থাকে আর সে তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে, তাহলে সে জান্নাতে যাবে।’ (তিরমিজি)

মেয়েদের দায়িত্ব পালনে জাহান্নামে আগুন থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয় নবি। অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন-
‘মেয়েদের লালন-পালনের দায়িত্ব যার কাঁধে অর্পিত হয় আর সে ধৈর্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তারা সে ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হয়ে থাকবে।’ (তিরমিজি)

পরিশেষে…
মেয়ে শিশুর দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জান্নাতে অবস্থান করবেন বলে যেভাবে হাদিসে বর্ণনা দিলেন, তাহলো-
‘যে দু’টি মেয়ে শিশুকে দেখাশোনা করল, লালন-পালন করলো, আমি এবং সে এভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবো। এ কথা বলে তিনি হাতের দুই আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন।’ (তিরমিজি)

মেয়ে শিশুর লালন-পালনকারী ব্যক্তির জন্য সেরা উপহার আর কী হতে পারে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও প্রিয় নবির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশের সুনিশ্চিত ঘোষণা।

সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, তাদের দেখলে বাবা-মায়ের চোখ জুড়িয়ে যায়। তাদের যে কোনো সফলতায় বাবা-মা তাদের কষ্টকে ভুলে যান। তাইতো এ দোয়ার মাধ্যমে সন্তানদের কল্যাণ কামনা করতে বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِیْنَ اِمَامًا.
উচ্চারণ : রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমামা।
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যারা হবে আমাদের নয়নপ্রীতিকর; আর আমাদেরকে আপনি মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফোরকান : আয়াত ৭৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজ কন্যাসহ মেয়ে শিশু ও নারীদের প্রতি উত্তম আচরণ ও সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। মেয়েদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইনিউজ ৭১/এম.আর