শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের মাধ্যমেই গড়ে ওঠবে সময়ের নতুন বিশ্ব। তাই ইসলাম শিশুকে স্নেহ-মমতা ও আদর-যত্ন দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছে। যাতে তারা প্রকৃত মানুষ ও সুনাগরিক হয়ে, দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করতে পারে।কিন্তু খবরের পাতায় ও গণমাধ্যমে চোখ বুলালে দেখা যায়, আমাদের দেশে বর্তমানে শিশু নির্যাতনের হার অনেক বেড়ে গেছে। দারিদ্র্যপীড়িত অনেক শিশুই লেখাপড়া ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। জীবনের তাগিদে তারা বিত্তবানদের ঘরে কাজ করে। কাজ করতে গিয়ে তারা অনেক সময় গৃহকর্ত্রী বা অন্যদের হাতে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে অনেকে আবার মারা যাওয়ার সংবাদও চোখে পড়ে।বস্তুত ইসলাম শুধু কিছু আচার-সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবনের প্রতিটি বিষয়ের পুঙ্খানোপুঙ্খ বয়ান রয়েছে ইসলামে। সমাজের ধনী, দরিদ্র ও ছোট-বড় সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার এবং কর্তব্যের কথা রয়েছে ইসলামে।
শিশুর প্রতি আচরণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুকে স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান দেখায় না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯২১)শিশুর প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণের তাগিদ দিয়ে মহানবী (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘শিশুদের প্রতি স্নেহ ও আদর দেখায় না, এমন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করা উচিত’। ওলামায়ে কেরাম বলেন, ছোটদের প্রতি দুর্ব্যবহার কবিরা গুনাহের সমপর্যায়ের। তাই আল্লাহর করুণা লাভ করতে ছোটদের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ আবশ্যক।আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার রাসুল (সাঃ) নিজ নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। সে সময় তার কাছে আকরা বিন হারেস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি দশ সন্তানের জনক। কিন্তু আমি কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি। তখন মহানবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না’। (বোখারি, হাদিস নং: ৫৬৫১)
ভালোবাসা ও স্নেহ শুধু নিজের বাচ্চাদের প্রতি ভালোবাসা সীমাবদ্ধ রাখা নয়। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশ আবশ্যক। বিশেষ করে মা-বাবার মমতা হারা শিশুদের স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করা চাই। তাদের প্রতি সাহায্য-সহায়তার হাত বাড়ানো জরুরি। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব।’ একথা বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৪৯৯৮)মহানবী (সা.) শুধু শিশুদের ভালোবাসেন নি। বরং তাদের খোঁজখবরও নিতেন। মাঝে-মধ্যে তাদের সঙ্গে আনন্দ-রসিকতা করতেন। ঘোড়া সেজে অনেক সময় নাতি হাসান ও হোসাইনকে পিঠে নিয়ে মজা করতেন।
আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার ছোট ভাইয়ের (তার উপনাম ছিল আবু উমায়ের) একটি বুলবুলি পাখি ছিল। সে তার প্রিয় পাখিটি নিয়ে খেলা করতো। একদিন পাখিটি মারা গেল। এরপর একদিন রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে এসে দেখলেন, আবু উমায়েরের মন খারাপ। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আবু উমায়ের মন খারাপ কেন? সবাই বললো, তার বুলবুলি পাখিটা মারা গেছে। তখন মহানবী (সা.) বললেন, ‘হে আবু উমায়ের! কী করেছে তোমার নুগায়ের?’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৯৭১)