মানুষের জন্য অনন্য ও একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম কুরআন। এ মহাগ্রন্থে আল্লাহ তাআলা মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন ও দিক-নির্দেশনা তুলে ধরেছেন। এমনকি দুনিয়ার জীবনে কার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা জরুরি কিংবা কাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবে এ বিষয়টিও বাদ যায়নি।
মুনাফিকরা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিস্ময়কর ঘটনায় উপহাস করতো। মুনাফিকদের উপহাসের প্রসঙ্গটি আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে তুলে ধরেছেন।
এ কারণে পরবর্তী আয়াতে মুমিন মুসলমান যেন কখনো মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আল্লাহ। আবার শর্তসাপেক্ষে অমুসলিমকে বন্ধু ভাবার কথাও বলেছেন। কুরআনে পাকে সে ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
لاَّ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُوْنِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللّهِ فِي شَيْءٍ إِلاَّ أَن تَتَّقُواْ مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللّهِ الْمَصِيرُ
অর্থ : `মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে (অবিশ্বাসী)বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম হলো, যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনিষ্ট কিংবা ক্ষতির আশঙ্কা কর, তবে (আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন করে) তাদের সঙ্গে সাবধানতা অবলম্বন করবে। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন এবং সবাকেই তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৮)
আয়াত নাজিলের কারণ
সুরা আল-ইমরানের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদেরকে উদ্দেশ্য করে সতর্কতা ও নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তারা কোনো মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন না করে। যদি কোনো কিংবা অনিষ্ট হওয়ার আশংকা করে তবে আত্মরক্ষার্থে ব্যতিক্রম সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন। সর্বোপরি সবাকেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে।
অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন
সব কর্তৃত্ব ও রাজত্ব, সম্মান ও মর্যাদা এবং সব ধরনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের লাগাম শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই হাতে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মুমিনের জন্যই শোভনীয় নয় যে, তারা মুমিন মুসলমান ব্যতিত অমুসলিম কিংবা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে।
আল্লাহ ও তার রাসুলের দুশমনরা কখনোই মুমিনের বন্ধু হতে পারে না। যারা অমুসলিম বা অবিশ্বাসীদের ধোঁকায় পড়ে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহর বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা তাদের নসিবে নেই।
একজন মুমিন মুসলমানের আশা-নিরাশা শুধু আল্লাহর সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকা জরুরি। যে বান্দার সঙ্গে মহান আল্লাহর বন্ধুত্বের সর্ম্পক রয়েছে তারাই তার আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাওয়ার উপযুক্ত।
হ্যাঁ, কৌশলগত কারণে অবিশ্বাসী কিংবা অমুসলিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন আল্লাহ তাআলা। আর তাহলো আত্মরক্ষার কৌশল।
এ অনুমতি সেসব দেশের মুসলিমদের জন্য, যারা অমুসলিম দেশে বসবাস করে। যদি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখলে সেখানে বসবাস সম্ভব নয়, তবে তাদের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে তাদের সঙ্গে মৌখিক সুসম্পর্ক বা বন্ধুত্ব প্রকাশ করা যাবে।
আবার দুনিয়ার প্রয়োজন কিংবা সুবিধার ক্ষেত্রে অমুসলিম ও মুসলিমদের সঙ্গে চুক্তি বা সন্ধি হতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেও হতে পারে।
আবার যেসব অমুসলিম বা অবিশ্বাসী মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে না সে সব অমুসলিমদের সঙ্গে উত্তম ও সৌজন্যমূলক আচরণ করাও বৈধ।
সুতরাং কুরআনের ঘোষণা ও নির্দেশনা হলো, কোনো অবিশ্বাসীকে মুমিন মুসলমান বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। কোনো অবিশ্বাসী প্রকৃতপক্ষেই মুমিন মুসলমানের বন্ধু হতে পারে না। কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী এক মুমিন শুধু অন্য মুমিনকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে।
সতর্ক থাকতে হবে যে, কোনোভাবেই যেন অমুসিলম কিংবা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বা রুক্ষ আচরণ করা না হয়। কেননা তাদের সঙ্গে সদ্ভাব ও উত্তম আচরণের কথা বলা হয়েছে। সামাজিকভাবে তাদেরকে হেয় করা কিংবা তাদের প্রতি খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের আলোকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।