যে আয়াত থেকে কাজের অনুপ্রেরণা পায় মানুষ
মানুষের অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম মাধ্যম মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। আল্লাহ তাআলা মানুষের অনুপ্রেরণা লাভের জন্য এ কিতাব নাজিল করেছেন। এ কিতাবেই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি নিজে সব সময় কাজে রত। আল্লাহ তাআলা সব সময় কাজে ব্যস্ত’-এ কথা থেকে বান্দাকে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। মানুষ যখনই আল্লাহর আনুগত্য করবে তখনই সে দুনিয়া ও পরকালে থাকবে নিরাপদ ও চিন্তামুক্ত। আর এ জন্যই তিনি মানুষকে আনুগত্য তথা কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন। মানুষ কাজের মাধ্যমে মর্যাদা ও সম্মান লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা নিজেও বসে নেই। তিনি নিজেও সদা সর্বদা কাজে ব্যস্ত। সুতরাং যেসব মানুষ সব সময় নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখে, মূলত সে ব্যক্তি আল্লাহর রঙে নিজেকে রঙিন করতে থাকে।
কুরআনুল কারিমের ছোট্ট একটি আয়াতে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। যারা এ আয়াতকে ফলো করবে তারাই সব সময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে অনুপ্রেরণা লাভ করবে। আর তাহলো-
‘আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার (আল্লাহর) কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তিনি প্রতি মুহূর্তেই কাজে রত।’ (সুরা আর-রহমান : আয়াত ২৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার প্রতি সাহায্য প্রার্থনার ইঙ্গিত দিয়েছেন আবার তিনি নিজে কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে এ কথা বুঝিয়েছেন যে, হে মানুষ! তোমরা নিজেরা অলস থেকো না, নিজেদের কাজে নিয়োজিত রাখ। আল্লাহ তাআলা বিশাল সৃষ্টিজগত পরিচালনায় সদা সর্বদা ব্যস্ত। তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। একটু দৃষ্টি প্রসারিত করলেই মানুষ তা দেখতে পাবে। তাফসিরে আহসানুল বয়ানে আল্লাহর কাজের বর্ণান এভাবে তুলে ধরা হয়েছে- ‘তিনি কাউকে রোগ থেকে সুস্থ করছেন। আবার কাউকে রোগ দিয়ে পরীক্ষা করছেন। কাউকে সম্পদ দিয়ে ধনী বানাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ধনীকে গরিবে পরিণত করছেন। কাউকে রাজত্ব দান করছেন আবার কারো কাছ থেকে রাজত্ব কেড়ে নিচ্ছেন। কাউকে মর্যাদায় উন্নীত করছেন আবার কাউকে অধঃপতনে নিপতিত করছেন। কাউকে সত্যের সন্ধান দিচ্ছেন আবার কাউকে নাস্তিকে পরিণত করছেন। মোট কথা দুনিয়ার সব কাজই তার ইচ্ছা এবং নির্দেশেই ঘটছে।
দিন ও রাতের এমন কোনো মুহূর্ত নেই যে সময় তিনি কোনো কাজ থেকে অবসর থাকেন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নিজের ব্যাপারে আয়াতুল কুরসিতে ঘোষণা করেন- ‘আল্লাহ;তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রা বা ঘুম স্পর্শ করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার জন্য।’
মানুষ একটু চিন্তা করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠবে-
পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন দিন আর মানুষ কর্মে ব্যস্ত ঠিক ওই মুহূর্তে পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে রাত আর মানুষ সেখানে ঘুমায়। আবার কোথাও নামাজের সময় মানুষ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে। আবার কোথাও মানুষ আল্লাহর নাফরমানি করছে।
আল্লাহ তাআলা দিন-রাতের এ সময়ে কাজ কিংবা ঘুমে, আবার ইবাদত কিংবা নাফরমানিতে প্রত্যেককেই পরিচালিত করেন। সবার আবেদন শুনেন। যার যার চাহিদা মোতাবেক যেখানে যা প্রয়োজন, তা-ই দিচ্ছেন। কোথাও যখন ঘূর্ণিঝড় কিংবা মরুভূমির ধুলিঝড় শুরু হয় তখন মানুষ আল্লাহর কাছে বাঁচার আর্তনাদ করে বলে ওঠে- হে আল্লাহ!। আল্লাহ তখন বান্দাকে তা থেকে রক্ষা করেন। আবার মানুষ যখন চরম বিপদ-আপদে পতিত হয় কিংবা মানুষের কোনো পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে নিরাশায় ভোগেন তখনও মানুষ ডাকে হে আল্লাহ!। আল্লাহ সে সময় মানুষকে তার রহমতের কোলে তুলে নেন।
এভাবেই আল।লাহ তাআলা কাউকে সম্মান দান করেন, আবার কাউকে কারণবশতঃ অপমানিত করেন। কাউকে নতুন সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনদান করেন আবার কাউকে মৃত্যু দেন। এভাবেই আল্লাহ তন্দ্র ও ঘুমহীন অবিরাম কাজে রত আছেন। আর এ কথা বলা হয়েছে সুরা আরহমানের ২৯নং আয়াতে। এ আয়াতই মানুষকে সব সময় কাজে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে প্রার্থনা করার। তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার শিক্ষা দেয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা আর-রহমানের এ ছোট্ট আয়াতটি থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা লাভ করে সব সময় গঠনমূলক কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।