মাতৃভাষার মর্যাদা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
মাতৃভাষার মর্যাদা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

মাতৃভাষা মহান প্রভুর বিস্ময়কর নিদর্শন। এ ভাষা অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যময়, বিবিধ এবং বিভিন্ন। মহান প্রভু কুরআনে সেকথাই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন-‘তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদেরে ভাষার বিভিন্নতা।’ (সুরা রূম : আয়াত ২২)মহান প্রভু ঘোষিত এ নির্দশনই হচ্ছে ভাষা। ভাষা সুস্পষ্ট না হলে মানব জীবনের সব কিছুই যেন অপূর্ণ। ভাষার স্বাধীনতা না থাকলে মৃত্যু হয় স্বাধীনতার। তাইতো সত্যের শ্লোগান দিতে, সত্যের জয়গান লিখতে প্রয়োজন স্বাধীন ভাষার।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একঝাঁক বাঙালি তরুণের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজকের ভাষার স্বাধীনতা। যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষার প্রতি ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে শ্রদ্ধা থাকুক সব ভাষা-গোষ্ঠী মানুষের।

মানুষ সে ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যে ভাষায় কথা বললে তা হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করা যায়। আর মাতৃভাষায় কথা বলা ছাড়া কোনো মানুষই পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ করতে পারে না। আর এ কারণেই যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবি-রাসুলের কাছেও স্বজাতির ভাষায় আসমানি গ্রন্থ নাজিল করেছেন।যাতে প্রত্যেক নবি-রাসুলই তাদের নিজস্ব ভাষায় আল্লাহর আহ্বান মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। তাওহিদের দাওয়াত সহজ ও সাবলীলভাবে পৌছাতে পারে। এ প্রসঙ্গটিও কুরআনে সুস্পষ্ট ওঠে এসেছে-আর আমি প্রত্যেক পয়গম্বরকেই (নবি-রাসুলগণকে) স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবেু বুঝাতে পারে। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪)এতো গেল ভাষার কথা। আল্লাহ তাআলা একই ভাষাভাষী মানুষের আঞ্চলিকতার ওপর গুরুত্বারো করেছেন। যে কারণে পবিত্র কুরআনের ভাষা আরবিকে তিনি ৭টি পঠন রীতিতে নির্ধারণ করেছেন। এ পঠনরীতি সাত ক্বিরাত নামে সপরিচিত।

ফিরে আসি ভাষার কথায়। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষই এ মাসটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বাংলা ভাষার মর্যাদা পেতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চরম অত্যাচার নির্যাতন স্বীকার করতে হয়েছিল অনেককেই।১৯৫২ সালের সে সময়টিতে যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন। দেশ মাতৃকার সে সূর্য সন্তান সালাম, জাব্বার, রফিক, বরকত ও সালাহউদ্দিনের মতো সব ভাষা শহীদ ও বীর সেনানীদের জন্যই থাকবে আজীবন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিক দোয়া।সে ভাষায় শুধু কথা বলা-ই নয় বরং অর্জিত স্বাধীন ভাষা বাংলায় এ দেশে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ময়দানে চলছে ধর্মীয় বয়ান ও পড়ালেখা। তাইতো বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের জন্য এ ভাষা মহান প্রভুর সেরাদান্

সুতরাং মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা যেহেতু মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এ ভাষা-ভাষী মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই ভাষা শহীদ সালাম, জাব্বার, রফিক, বরকত, সালাহউদ্দিনসহ সব ভাষা সৈনিকদের আত্ম-ত্যাগকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন।সর্বোপরি ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা যেমন প্রতিটি মানুষের ঈমানি দাবি। তেমনি ভাষার জন্য যাদের অবদান রয়েছে সে সব ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করাও ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা সকল ভাষা শহীদদের সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।

মনে রাখতে হবে
ভাষা ও দেশ এক সুতোয় গাঁথা। আল্লাহ তাআলা ভাষাকে দেশের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাই আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা ‘বাংলা ভাষা’র প্রতি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান করা জরুরি।
কবির ভাষায় বলতে চাই-
‘পাখির ভাষায় গাইছে পাখি
ভোর বিহনের গান
আমার ভাষায় তেমনি আমি
তুলব সুরের তান
আমার গানে আমার সুরে
জাগবে সাড়া ভুবন জুড়ে
জানবে সবে বাংলা ভাষার
নিবিড় উপাখ্যান-
বাংলা ভাষায় গাইব আমি
বাংলাদেশের গান।’

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠীকে তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার তাওফিক দান করুন। বাংলা ভাষার জন্য জীবনদানকারী সব ভাষা সৈনিককে পরকালে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দান করুন। আমিন।