প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩১
সম্প্রতি এক ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির আত্মহত্যার পর তার পরিবার ঋণ করে চল্লিশা পালন করেছে। এ ঘটনাকে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ঋণের ভারে যিনি জীবন শেষ করলেন, সেই ব্যক্তির জন্য ঋণ করে চল্লিশা করা হলো। এই ঘটনার মাধ্যমে দীনি শিক্ষার অভাব এবং দীন সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রভাব আমরা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারছি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক ও প্রাকৃতিক ধর্ম। ইসলাম যেসব আর্থিক ইবাদত আবশ্যক করেছে, সবই সামর্থ্যবানদের জন্য। তবে সমাজে চল্লিশা নামক কুসংস্কারটি সবার ওপর আবশ্যক হিসেবে চালু হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ঋণ বা সম্পদ বিক্রি করেও এটি পালন করতে বাধ্য হয়, যা ইসলামের মূল নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, চল্লিশার অযৌক্তিকতা ও অন্তঃসারহীনতা বোঝার জন্য অন্যান্য দলিল-প্রমাণকে একপাশে রেখে শুধু এটুকুই যথেষ্ট যে, ব্যক্তি ঋণে জর্জরিত হয়ে মারা গেছে। এখানে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান এবং মানুষের তৈরি নিয়মের পার্থক্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ইসলামী শিক্ষায় সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু চল্লিশা এই প্রাকৃতিক সীমার বাইরে চলে গেছে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, আধুনিক সময়ে ঋণ এমন একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে যা দরিদ্র মানুষকে আরও নিঃস্ব করে তুলছে। সুদবিহীন ঋণও প্রায়ই স্বপ্নের মতো দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবে অভিশপ্ত সুদ দরিদ্রকে ক্রমশ নিঃস্ব করে আর সুদি মহাজনদের ধনী করে তোলে। আলোচিত ঘটনা এ প্রক্রিয়ার এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ঋণের ছোবলে মানুষ জীবনের শেষ পথ বেছে নিতে পারে—এটি কতোটা গভীর এবং সমাজে কতটা প্রভাব ফেলছে। এমন পরিস্থিতি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, ইসলামী অনুশাসন ও মূল্যবোধ ছাড়া প্রকৃত সুখের ঠিকানা কখনো পাওয়া সম্ভব নয়।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এই ধরনের ঘটনা দুদিন পরপর ঘটছে। আমাদেরকে দীনের চর্চা ও ইসলামী নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে, যাতে ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ই ন্যায় ও সামর্থ্যের সীমানার মধ্যে থেকে জীবন পরিচালনা করতে পারে।
এ ঘটনায় প্রতিফলিত হচ্ছে সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার ঘাটতি, আর্থিক সচেতনতার অভাব এবং কুসংস্কারের নেতিবাচক প্রভাব। এই শিক্ষণীয় উদাহরণ আমাদেরকে ইসলামী নীতি অনুযায়ী জীবনযাপনের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে।