প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫০
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এবং সাফল্য-বিফল সবই একে অপরের পরিপূরক। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দ্বারা; আর ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে” (সূরা বাকারা: ১৫৫)। সংকটের মুহূর্তে এই ধৈর্যই একজন মুমিনের জন্য প্রধান আশ্রয়। ধৈর্য মানে কেবল কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক, কারণ তার সবকিছুই কল্যাণকর; যদি সে সুখ পায়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আর তা তার জন্য কল্যাণকর হয়; আর যদি সে কষ্টে পড়ে, ধৈর্য ধারণ করে, আর সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়” (সহিহ মুসলিম)। সংকটময় সময়ে ধৈর্য ধরে থাকা মানে শুধু নিজেকে শক্ত রাখা নয়, বরং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
সংকট যখন ব্যক্তিগত জীবনে আসে, যেমন আর্থিক ক্ষতি, অসুস্থতা কিংবা প্রিয়জন হারানো, তখন মুমিনকে কুরআনের এই বাণী স্মরণ রাখতে হয়, “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি” (সূরা ইনশিরাহ: ৫-৬)। আল্লাহ এখানে দ্বিগুণ আশ্বাস দিয়েছেন—কষ্টের পর স্বস্তি অবশ্যম্ভাবী। তাই হতাশ হওয়া ইসলামে গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
ধৈর্য ধারণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নামাজ ও দোয়া। কুরআনে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন” (সূরা বাকারা: ১৫৩)। অর্থাৎ বিপদের সময়ে মুমিনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া।
এছাড়া সঠিক সঙ্গ ও আল্লাহভীরু সমাজে থাকা সংকট মোকাবেলায় সহায়ক। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুমিন মুমিনের ভাই, তারা একে অপরকে শক্তি জোগায় এবং সহায়তা করে” (সহিহ বুখারি)। অর্থাৎ কেবল ধৈর্য নয়, পারস্পরিক সহযোগিতাও সংকট নিরসনে অপরিহার্য।
ধৈর্যের ফল সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে সীমাহীন প্রতিদান দেওয়া হবে” (সূরা যুমার: ১০)। তাই যে মুমিন আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করে, সে শুধু দুনিয়ায় শান্তি পায় না, আখেরাতেও অফুরন্ত পুরস্কার লাভ করে।
বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক অস্থিরতাতেও মুমিনকে ধৈর্যের শিক্ষায় উজ্জীবিত হতে হবে। হতাশা ও অভিযোগের পরিবর্তে আল্লাহর রহমতের আশায় থাকতে হবে এবং সৎ কাজের পথে দৃঢ় থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সংকটময় সময়ে ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা কেবল মানসিক শান্তি দেয় না, বরং ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। আর এই ধৈর্যই মুমিনকে আল্লাহর নিকট প্রিয় করে তোলে এবং তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে।