প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪০
ইসলামে ন্যায়বিচার একটি মৌলিক শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এবং তা ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে সাক্ষ্য দাও। কোনো জাতির প্রতি ঘৃণা তোমাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বিরত না রাখুক। ন্যায়বিচার করো, এটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী” (সূরা মায়েদা: ৮)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে মুসলমানের জীবনে ন্যায়বিচার কেবল সামাজিক দায় নয়, বরং আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অংশ।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে ন্যায়বিচারের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। তিনি মুসলমান ও অমুসলিম সবার জন্য সমান বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। একবার একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারভুক্ত নারী চুরির দায়ে অভিযুক্ত হলে অনেক সাহাবি তার শাস্তি লঘু করার অনুরোধ করেন। কিন্তু রাসূল (সা.) স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আল্লাহর কসম! যদি আমার মেয়ে ফাতিমাও চুরি করত, তবে তাকেও আমি একই শাস্তি দিতাম।” এই শিক্ষা থেকে বোঝা যায়, ইসলামে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কারও সামাজিক মর্যাদা বা পরিচয় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
আজকের সমাজে আমরা দেখছি, অন্যায় ও বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য, প্রভাবশালীদের রক্ষা এবং দুর্বলদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অথচ ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো হারাম এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত তাকওয়ার প্রতিফলন।
কুরআনের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার যোগ্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেবে এবং মানুষের মাঝে যখন বিচার করবে, তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার করবে” (সূরা নিসা: ৫৮)। এ আয়াত কেবল বিচারকের জন্য নয়, বরং প্রতিটি মানুষের জন্য নির্দেশনা। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র—সব জায়গায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা একান্ত দায়িত্ব।
ন্যায়বিচার শুধু আদালতের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নয়। একজন ব্যবসায়ী যখন সঠিকভাবে মাপজোক করে, তখনও সে ন্যায়বিচার করছে। একজন শিক্ষক যখন পক্ষপাতিত্ব ছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেন, তখনও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়। একইভাবে রাষ্ট্র যখন আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করে, তখন প্রকৃত ন্যায়বিচার সমাজে দৃশ্যমান হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ন্যায়বান শাসক আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে, যেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না” (সহিহ মুসলিম)। এই হাদিস প্রমাণ করে যে নেতৃত্বের মূল চাবিকাঠি হলো ন্যায়বিচার। একজন ন্যায়পরায়ণ নেতা শুধু জনগণের ভালোবাসাই পান না, বরং আল্লাহর কাছেও বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেন।
অতএব বর্তমান সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা কেবল রাষ্ট্রের কাজ নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আমরা যদি পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র ন্যায়বিচার চর্চা করি, তবে সমাজ থেকে বৈষম্য ও অন্যায় অনেকটাই দূর হবে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইসলামের মূল বার্তা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা মেনে চললে সমাজে শান্তি, সাম্য ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হলো প্রকৃত ইসলামী সমাজব্যবস্থার ভিত্তি।