রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে প্রায়ই ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে এই নৌপথে ফেরিসহ অন্য নৌযান চলাচল তিন ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ ছিল। এ সুযোগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পদ্মা নদীতে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকলেও নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই।
সরজমিনে শুক্রবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন। ঘাট এলাকায় নৌ পুলিশের সদস্যদের দেখা যায়নি। গত কয়েক দিনও এ চিত্র দেখা গেছে। ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধের সময় ট্রলারে অহরহ যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ঘাটে থাকা বাসযাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, এই ঘন কুয়াশায় অবৈধভাবে অনেক ট্রলার চলাচল করছে। এখানে উচিত ছিল কতৃপক্ষের নজর দেয়া। কিন্তু কোন প্রশাসনিক লোককে দেখছিনা। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা গাজীপুর গামী যাত্রী আক্কাস সরদার বলেন, এখানে ঘন কুয়াশার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি ফেরি বন্ধ কিন্তু নদীতে অনেক ট্রলার চলাচল করছে। আবার অনেকে দেখছি ঝুঁকি নিয়েই নদী পারাপার হচ্ছে। এখানে নৌপুলিশ নাই। নিরাপত্তা নাই।
কুষ্টিয়া থেকে আসা মাহফুজ ও কামাল শেখ নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, জরুরি কাজে সাভার যেতে হবে তাঁদের। কখন ফেরি ছাড়বে, কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই মোটরসাইকেল ভাড়া ৫০০ ও দুজনের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও দর-কষাকষি করে ১০০ টাকা দিয়ে মোট ৬০০ টাকায় ট্রলারে ওঠেন।
সকালে নদী পাড়ি দিতে দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষায় ছিলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করি। ফেরি বন্ধ থাকায় চাকরি বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পাড়ি দিচ্ছি। আবার ট্রলারে ভাড়া নিচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা।
এ বিষয়ে শিমুল নামের এক ট্রলারচালক বলেন, আজ কুয়াশায় ফেরি বন্ধ। ঘাটেই বসে ছিলাম। ভাবলাম দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ায় একটি ট্রিপ দেয়া আসি। তবে কুয়াশায় নদী পার হতে বেশি সময় লাগছে।
ঘাট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, ঘন কুয়াশায় ফেরি ও লঞ্চ বন্ধ রাখার সুযোগে ঘাটের সুবিধাভোগী চক্র বাড়তি টাকা নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করছে। চার কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা এবং মোটরসাইকেল পারাপারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। কখনো কখনো এর চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকলেও মাঝেমধ্যে ট্রলার ভিড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করতে দেখা যায়। এতে ফেরির ধাক্কায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। স্থানীয় নৌ পুলিশকে এ বিষয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘কুয়াশায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপরও যাত্রী পারাপারের কথা শুনে গত সপ্তাহে একাধিক অভিযান চালিয়েছি। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই ওরা সটকে পড়েন। জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।