সেই কল্পনা ফিরছে বাড়ি, নতুন করে শুরু হবে পড়াশোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌরভ নূর , বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৩০শে জানুয়ারী ২০২৫ ১২:১২ অপরাহ্ন
সেই কল্পনা ফিরছে বাড়ি, নতুন করে শুরু হবে পড়াশোনা

আজ বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরছে কল্পনা। হাসি ঝলমলে মুখে সে বলছে, এবার বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা শুরু করবে। প্রশ্ন করলে জানায়, আগে পড়ার সুযোগ হয়নি, তবে এবার নিয়মিত পড়বে। কল্পনার বাবা শহীদ মিয়া ও মা আফিয়া বেগমও মেয়ের সঙ্গে একই আশা প্রকাশ করেন।  


প্রিয় পাঠক, কল্পনার কথা হয়তো আপনাদের মনে আছে। ১৩ বছর বয়সি কল্পনা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত। সেখানে গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান তাকে নির্যাতন করে সামনের চারটি দাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন। এছাড়াও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছিলেন। ১৯ অক্টোবর গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে আসে কল্পনা। তখন মা-বাবা শঙ্কায় ছিলেন মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে কি না।  


৩ মাস ১০ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ কল্পনা। আজ সে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সদন গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ষষ্ঠ তলায় ভিআইপি কেবিনে কথা হয় কল্পনা ও তার পরিবারের সঙ্গে।  


মা আফিয়া বেগম জানান, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের সংসার তার। স্বামী কাঠমিস্ত্রি ছিলেন, কিন্তু এক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পাওয়ার পর আর কাজ করতে পারেননি। চরম অভাবে পড়ে মেয়েকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠাতে বাধ্য হন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য স্বামী ও তিনি তিন মাস হাসপাতালেই ছিলেন।  


কল্পনাকে নির্যাতনের অভিযোগে আফিয়া বেগম ভাটারা থানায় দিনাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলা চলমান আছে। কল্পনার আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার জানান, অভিযুক্ত দিনাত জাহান ও তার ভাই আনান বর্তমানে কারাগারে আছেন।  


ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কল্পনা হাসপাতালে আসার সময় তার ওপরের পাটির সামনের চারটি দাঁত ভাঙা ছিল। হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর ও ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মানসিক ট্রমাও ছিল তার। বেশ কয়েকটি সফল অপারেশনের পর এখন অনেকটাই সুস্থ কল্পনা।  


বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, কল্পনার স্থায়ী দাঁতের ব্যবস্থা করেই তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তার তিন দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও তার ভালো খাবার ও পরিচর্যার প্রয়োজন আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কল্পনার চিকিৎসা ব্যয় বহন করেছে। সমাজ কল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ তার পড়াশোনাসহ যাবতীয় ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন।