হে মুসলিম, তিনটি কাজ জান্নাতের অন্তরায়! আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতায় লিপ্ত তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে না। সেই কাজ তিনটি কী বা তাদের পরিচয় কী?ইসলামের প্রথম শহিদ হজরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার সন্তান হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস ফুটে ওঠেছে। যাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিন শ্রেণির মানুষ কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদিসের বর্ণনাটি এমন-হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণির মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (তারা হলো)-
১. যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়।
২. যে পুরুষ নারীর বেশ ধারণ করে।
৩. যে ব্যক্তি নিয়মিত নেশাদ্রব্য পান করে।’ (আত-তারগিব : ৩৩৮১)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বেহায়াপনা, নারীর বেশ ধারণ এবং নেশাদ্রব্য থেকে বেঁচে থাকা। আর আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এ দোয়াগুলো করা-
১. হজরত যিয়াদ ইবনে ইলাক্বাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
২. হজরত আবু আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল্লাম- আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন বাচারি ওয়া মিন শাররি লিসানি ওয়া মিন শাররি ক্বালবি ওয়া মিন শাররি মানিয়্যি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানে মন্দ কথা শোনা থেকে আশ্রয় চাই। চোখ দিয়ে মন্দ কিছু দেখা থেকে আশ্রয় চাই। জিহ্বা দিয়ে মন্দ কিছু বলা থেকে আশ্রয় চাই। অন্তরের খারাপ চিন্তা থেকে আশ্রয় চাই। দেহের কামনা-বাসনার খারাপ চিন্তা থেকেও আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)
৩. কোনো ব্যক্তি যদি মদ পান বা জেনার নেশায় পড়ে যায়; সে ব্যক্তি যদি আল্লাহ তাআলা গুণবাচক নাম (اَلْبَرُّ) ‘আল-বার্রু’ ৭ বার পাঠ করে; তবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরকে এ সব খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে দেবেন।উল্লেখ্য, কোনো পুরুষের জন্য নারীর বেশ ধারণ করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। হাদিসের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট। তাহলো-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন-
لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)
এ কারণে কোনো পুরুষের জন্য নারীর মতো করে চলাফেরা, উঠাবসা, কথাবার্তা ইত্যাদি কাজে জড়িত হওয়া যাবে না। বরং পুরুষকে পুরুষের মতো চলাফেরা করা উচিত। আর নারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী চলাফেরা করবে। নিজেদের ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করবে। আর তাতে মিলবে মহান আল্লাহর একান্ত রহমত ও কল্যাণ।
সুতরাং কোনো পুরুষের জন্য গলায় হার, হাতে চুড়ি, পায়ের মল, কানের দুল পরা চলবে না। অনুরূপভাবে মহিলারাও পুরুষদের মতো জামা, পাজামা, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী পরতে পারবে না। নারীদের পোশাকের ডিজাইন পুরুষদের থেকে ভিন্নতর হবে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ
‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন সেই পুরুষের ওপর যে মেয়েলি পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীর ওপর যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।’ (আবু দাউদ মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমল করে জান্নাত সুনিশ্চিত করা। হাদিসে ঘোষিত তিনটি কাজ, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বেহায়াপনা থেকে বিরত থাকা। নারী-পুরুষ একে অপরের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা এবং নেশায় জড়িত না হওয়া।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত তিনটি কাজ থেকে বিরত থাকার এবং আল্লাহর কাছে দোয়া ও আমলের মাধ্যমে আশ্রয় চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।