রসুল (সা.) ছিলেন সুমহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর অনুপম আদর্শ ও অনন্য গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সুরা আহজাব)। কবি হাসসান বিন সাবেত (রা.) কতই না চমৎকারভাবে বলেছেন- “আপনার চেয়ে মনোহর কোনো মানুষ দেখিনি এ পৃথিবীতে কোনো মা পারেনি আপনার চেয়ে সুন্দর শিশু জন্ম দিতে আপনি সৃজিত হয়ে এসেছেন- ত্রুটিহীন আর নিখুঁত কত! যেনবা আপনি সৃজিত হলেন আপনার নিজ মনের মতো’’।
নিম্নে রসুল (সা.) এর অনুপম আদর্শের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো- অধীনস্তদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন : হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি ১০ বছর ধরে আল্লাহর রসুল (সা.) এর খেদমত করেছি। তিনি আমার কোনো আচরণে বিরক্ত হয়ে কখনো উহ বলেননি এবং কখনো বলেননি যে, অমুক কাজ কেন করলে? অমুক কাজ কেন করলে না (মুসলিম)?
অপরের প্রতি সীমাহীন সৌজন্যতা প্রদর্শন করতেন : আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, কারও সঙ্গে তিনি মোসাহাফা করলে, নিজের হাত ওই ব্যক্তির হাত থেকে বের করে নিতেন না, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি নিজের হাত বের করে নিত। এমনিভাবে তিনি ওই ব্যক্তি থেকে চেহারা অন্যদিকে ফিরাতেন না, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি চেহারা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিত। কখনো তাঁকে এমন অবস্থায় দেখা যায়নি যে, বৈঠকে বসা ব্যক্তিদের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছেন (তিরমিজি)।
শত্রুদেরও ক্ষমা করে দিতেন : এক হাদিসে আছে, যখন মুনাফিক-সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুলকে কবরে নামানো হয়, তখন রসুল (সা.) সেখানে গমন করে তাকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দেন। এরপর তার লাশ স্বীয় হাঁটুর ওপর রাখেন, মুবারক মুখের পবিত্র থুথু তার শরীরে দেন এবং নিজের পরিধেয় জামা তাকে পরিয়ে দাফন করেন (বুখারি)।
নিজের কাজ নিজে করতেন : আয়েশা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) এর অভ্যাস ছিল, তিনি নিজেই নিজের কাপড়, টুপি ও জুতা ইত্যাদি সেলাই করতেন। রসুল (সা.) সাধারণ মানুষের ব্যতিক্রম কোনো কিছু ছিলেন না। মানব সন্তানেরই একজন ছিলেন। এ জন্য সাধারণ থেকে সাধারণ কাজ তিনি নিজ হাতে করতেন। ছাগলের দুধ নিজে দোহন করতেন। ব্যক্তিগত কাজ-কর্মও নিজ হাতে করতেন (তিরমিজি)।
ঘরের কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন : আসওয়াদ বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রসুল (সা.) ঘরে এসে কী করতেন? তিনি বলেন, পরিবারের লোকদের ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। এরপর যখন নামাজের সময় চলে আসত, তখন তিনি সবকিছু ছেড়ে নামাজে চলে যেতেন (বুখারি)। আল্লাহতায়ালা আমাদের রসুলের আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুক। আমিন।
.... মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।