বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে যাদের পাঠানো অর্থ, ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে তাদেরই নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার উইংয়ের কর্মীদের বিরুদ্ধে দূতাবাসের মধ্যেই পেটানোর ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষু্ণ্ণ করছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, ঘটনাটি তারও নজরে এসেছে। তিনি মঙ্গলবার বলেন, ‘কিছু তথ্য আমার কাছে এসেছে, আমি তা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি (ব্যবস্থা নেয়ার জন্য)।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দূতাবাসগুলো থাকলেও সেখানে বিভিন্ন পদে অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরাও নিয়োগ পান, যাদের কর্তৃত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকে। দূতাবাসের ভেতরে নির্যাতনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা একটা অপরাধ, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ জনশক্তি রফতানির বাজার হিসেবে ব্রুনেইয়ে বড় সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ। গত এপ্রিলেই দেশটি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক এখনই রয়েছে। বাংলাদেশেও দেশটির বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশ মিশন চলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বহির্ভূত কর্মকর্তাদের দিয়ে; সেখানে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাই নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আপনি কী করে জানলেন, তারা (মারধরকারীরা) হাইকমিশনের কর্মী?’ এই বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। পরে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি আর সাড়া দেননি। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বাংলাদেশের জিডিপিতে এর অবদান ১২ শতাংশের মতো। বাংলাদেশের অর্থনীতির অগযাত্রায় প্রবাসী শ্রমিকদের ‘নেপথ্য নায়ক’ বিভিন্ন সময় অভিহিত করা হলেও প্রবাসে দূতাবাসগুলোতে তাদের নানা বঞ্চনার খবরই বেশি আসে।
ব্রুনেই দূতাবাসে নির্যাতনের সর্বশেষ যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যায়, প্রবাসী এক কর্মী দূতাবাস কর্মকর্তার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, ওই কক্ষে আরও পাঁচ-ছয়জন রয়েছেন, যারা একজন একজন করে এসে কর্মকর্তার পাশে দাঁড়ানো প্রবাসী শ্রমিককে কিল-ঘুষি এমনকি লাথিও মারছেন। এসব ঘটনায় হাইকমিশনারের কাছে পাঠানো ওই মিশনের হেড অব চ্যান্সেরি মইনুল হাসানের লেখা একটি চিঠি দেখা যায়, নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত করতে সুপারিশ করা হয়। ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওতে নির্যাতনের সময় টেবিলের ওপাশে বসা কর্মকর্তা হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রশিদ। তিনি কাজ করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি জিলাল হোসাইনের অধীনে। তারা দু’জনই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
এই ভিডিওর নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে ২১ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। চিঠিতে এ ঘটনার সত্যতাও স্পষ্ট হওয়া যায়। ওই চিঠি অনুযায়ী, প্রবাসী কর্মী ও জনশক্তি রফতানির এজেন্টদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত বছরও দূতাবাসের ভেতরে এমন নির্যাতনের ভিডিও এসেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দূতাবাসের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নুরুল ইসলাম ডাবলু নামে এক ব্যক্তি, যিনি সর্বশেষ ভিডিও নিজের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ব্রুনেই অবস্থিত বাংলাদেশ এমবাসিতে নিযুক্ত লেবার অফিসারের আচরণ দেখুন। কত অমানবিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে।
‘অপরাধ বা বাটপারি কিংবা কাহারো সাথে প্রতারণা যদি উক্ত ব্যক্তি করেও থাকে, তার বিরুদ্ধে কি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতেন না? কোন ক্ষমতাবলে এই অফিসার তার নিজ অফিসের অভ্যন্তরে অফিসিয়ালি গণপিটুনির ব্যবস্থা করলেন? এটা কতটা যৌক্তিক? কে দিয়েছে তাকে এই পাওয়ার? কিভাবে সে, এমবাসির মধ্যে ধরে এনে মানুষ পিটায়?’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।