খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:০৫ অপরাহ্ন
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগ

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া ৭৪ বছর বয়সী মিসেস জিয়া এখন কারাবন্দী রয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়, আগে থেকেই নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা খালেদা জিয়ার অবস্থা আটকের পর আরও অবনতি হয়েছে।

অ্যামনেস্টি বলছে, গত পহেলা এপ্রিল থেকে তিনি হাসপাতালে রয়েছেন, যেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে এটা চলছে এই উদ্বেগের মধ্যেই যে সেখানে তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে এবং ন্যায় বিচার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, "অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি জাতিসংঘের বন্দীদের সাথে আচরণের স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস (যা নেলসন ম্যান্ডেলা রুলস নামে পরিচিত) অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া এবং তার ন্যায়বিচারের পাওয়ার অধিকারের প্রতি সম্মান দেয়ার আহবান জানাচ্ছে"।

যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ
অ্যামনেস্টির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে দেয়া গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী খালেদা জিয়া আথ্রাইটিস ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে বলেছেন খালেদা জিয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁর মেডিকেল রেকর্ডস দিতে রাজী হয়নি সরকার। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা দেয়ার যে সুপারিশ করেছে, তাও সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও সরকারের মেডিকেল বোর্ড তাঁর স্বাস্থ্য 'ভালো' বলে মন্তব্য করেছে।

অ্যামনেস্টির বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়, "এটা গভীর উদ্বেগের এবং বন্দীদের সাথে জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া ন্যূনতমের মানদণ্ডের পরিপন্থী"। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী "সব বন্দীর স্বাস্থ্যসেবা এবং গোপনীয় মেডিকেল ফাইল যথাযথ ভাবে করা হবে এবং সব বন্দীর সেগুলো পাওয়ার অধিকার থাকবে। একজন বন্দী তার মেডিকেল ফাইল পেতে তৃতীয় কাউকে নিয়োগ দিতে পারবেন"। ইউএন স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলসের রুল ২৪ অনুযায়ী, বন্দীদের স্বাস্থ্যসেবা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং কমিউনিটিতে যে ধরণের স্বাস্থ্যসেবা আছে সে মানের চিকিৎসা তার পাওয়া উচিত কোনো বৈষম্য ছাড়াই।

অ্যামনেস্টি মনে করে, বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে এবং "একজন ব্যক্তির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে" তা পূরণ করতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ন্যায় বিচারের অধিকার
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে। এর মধ্যে চারটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আর বাকীগুলো বর্তমান সরকারের আমলে করা। অ্যামনেস্টি বলছে, "কিছু অভিযোগ আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যেমন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি কিংবা ভুয়া জন্মদিন পালন"।

সংস্থাটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়ার মামলার সঠিক শুনানি নিয়েও উদ্বেগ আছে। যেমন চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বয়স, শারীরিক অবস্থাসহ কিছু বিষয় বিবেচনা করে হাইকোর্ট জামিন দিলেও আপিল বিভাগ তার আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনেই তা স্থগিত করে দেয়, যা আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন।

আবার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়াই পুরনো ঢাকার কারাগারে বিচারকার্য পরিচালনাকে তার আইনজীবীরা নির্বাহী বিভাগের 'জুডিশিয়াল পাওয়ার'-এর অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিবৃতিতে একথাও উল্লেখ করা হয়। অ্যামনেস্টি বলছে, এসব কারণে খালেদা জিয়ার বিচার পাওয়ার ও প্রকাশ্য শুনানির অধিকার সম্পর্কে মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "সেজন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল খালেদা জিয়াকে তার চাহিদা অনুযায়ী বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া এবং পূর্ণ সম্মানের সাথে তার ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে"।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে আটক রয়েছেন এবং একজন বন্দী হিসেবে চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টিতে জামিন পেয়েছেন তিনি। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ও জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর