ছাত্রলীগের বিতর্কিত ৩২ কেন্দ্রীয় নেতাকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৩৭ অপরাহ্ন
ছাত্রলীগের বিতর্কিত ৩২ কেন্দ্রীয় নেতাকে অব্যাহতি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থাকা বিতর্কিত ২১ নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিজেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ১১ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় (ভারপ্রাপ্ত) ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন অব্যাহতি চেয়ে এর আগে আবেদন করেছেন। আর ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মোট ৩২ জনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। স্বেচ্ছায় অব্যাহতির আবেদনের ভিত্তিতে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সহসভাপতি এস এম তৌফিকিল হাসান সাগর, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বিএম শাহরিয়ার হাসান, হাফিজুর রহমান, এস এম হাসান আতিক, স্বাস্থ্য সম্পাদক শাহরিয়ার ফেরদৌস, উপ স্বাস্থ্য সম্পাদক রাতুল শিকদার, শাফিউল সাজিব, উপপ্রচার সম্পাদক সিজাদ আরেফিন শাওন, উপপাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী, সহসম্পাদক আঞ্জুমানারা অনু৷ তাদের বিরুদ্ধে, মাদক, বিবাহিত, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তসহ সংগঠনের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত অভিযোগ ছিল। 

অভিযোগের ভিত্তিতে অব্যাহতি পাওয়া ২১ ছাত্রলীগ নেতা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তানজিল ভূঁইয়া তানভির, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আতিকুর রহমান খান, বরকত হোসেন হাওলাদার, শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ, সাদিক খান, সোহানী হাসান তিথী, মুনমুন নাহার বৈশাখী, আবু সাঈদ, রুহুল আমিন, রাকিব উদ্দিন, সোহেল রানা, ইসমাইল হোসেন তপু। দফতর সম্পাদক আহসান হাবীব, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দীন, উপদফতর সম্পাদক মমিন শাহরিয়ার ও মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সী, উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার ও আফরিন লাবনী, সহসম্পাদক সামিয়া সরকার ও রনি চৌধুরী।

তাদের মধ্যে সহসভাপতি তানজিল ভুঁইয়া তানভির বয়স উত্তীর্ণ, আরেফিন সিদ্দিক সুজন মাদক ব্যবসায়ী, রুহুল আমিন ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, সাদিক খান বিবাহিত, সোহানী হাসান তিথী বিবাহিত, দফতর সম্পাদক আহসান হাবিব চাকরিজীবী, মুনমুন নাহার বৈশাখীর বিরুদ্ধে বিবাহিত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের পদ হারানো সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব পান গত বছরের ৩১ জুলাই। দায়িত্ব পাওয়ার ৯ মাস পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন করার অভিযোগ তোলেন পদবঞ্চিতরা।

প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের ওপর শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরা হামলা চালায়। এরপর হামলাকারীদের বিচার ও ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পদবঞ্চিতরা। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯ জনের পদ শূন্য করেন শোভন-রাব্বানী। তবে সে সময় তাদের নাম ও পদবি প্রকাশ করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন পদবঞ্চিতরা। এরই মধ্যে শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে অপসারণ করা হলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করতে কাজ শুরু করেন তারা। অবশেষে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পর বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে এই বিষয়ে বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ আন্দোলনের মুখপাত্র বিগত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ হয়েছে। এটি আনন্দের সংবাদ হলেও অব্যাহতিপ্রাপ্তদের তালিকাটি সংক্ষিপ্ত। এখনও অনেক বিতর্কিত রয়ে গেছে। তাদের যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়ার দাবি জানাই।’

ইনিউজ ৭১/এম.আর