বাংলাদেশের শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ডে উন্নীত করতে সংস্কারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘নিরাপন’-এর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শ্রম আইন সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এসব উদ্যোগের বাস্তব ফলাফল দেখা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফী সিদ্দিকী বলেন, শ্রম আইন সংস্কারের অংশ হিসেবে শ্রমিক সংগঠন ও গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ১৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হয়েছে। তার দাবি, এসব উদ্যোগ পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
গার্মেন্টস শিল্পে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিরাপনের চেয়ারম্যান সাইমন সুলতানা। নিরাপনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন সংগঠনের স্বতন্ত্র পরিচালক তপন চৌধুরী। বৈঠকে শীর্ষ পশ্চিমা ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন, যারা বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সচিব প্রধান লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তারা বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শ্রম আইন সংস্কার করা হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক শ্রম বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। তিনি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেন।
শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে শ্রম অস্থিরতা কমবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। তারা আশা প্রকাশ করেন, শ্রম আইন সংস্কারের এই উদ্যোগ শ্রমজীবী মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলছে, শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আইএলও মনে করে, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর মনিটরিং থাকতে হবে।
শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে সরকারের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।