ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তবে এখনো দলের নাম, কাঠামো, গঠনতন্ত্র ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জানা গেছে, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করে নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। যদিও তিনি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি, তবে সরকারের সঙ্গে তার অবস্থান সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল গঠনের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। নতুন দলের কাঠামো, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে এবং পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করা হবে। তিনি আরও জানান, নতুন দলে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী কাঠামো থাকবে না এবং এটি পুরনো রাজনীতির দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে অর্থের উৎস সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। জনগণের মতামত নিয়ে দলের নাম চূড়ান্ত করা হবে। বিভিন্ন দেশের গণআন্দোলন থেকে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে, যাতে কার্যকর একটি কাঠামো গঠন করা যায়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ জানান, নতুন দল গঠনের ব্যাপারে প্রতিদিনই বৈঠক হচ্ছে এবং সদস্যরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। দলের লক্ষ্য ও কর্মসূচি নির্ধারণের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রংপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত লংমার্চ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। যদিও দলের মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতা নয়, বরং দেশের কল্যাণ সাধন। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া ছাত্ররা নির্বাচনকে ব্যবহার করতে চায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এদিকে দল গঠন প্রসঙ্গে জানাকের কেন্দ্রীয় সদস্যরা জানিয়েছেন, নতুন দল হলেও জানাক বহাল থাকবে। এটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন দল গঠন ছাত্ররাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক বলেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে এই দল ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি মেটাতে তরুণদের এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এদিকে, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. বুরহান উদ্দিন নোমান মনে করেন, ছাত্রদের এই দল গঠনের উদ্দেশ্য যদি শুধুই ক্ষমতা দখল হয়, তাহলে এটি টিকে থাকতে পারবে না। তবে তারা যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেম ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে এগোয়, তাহলে এই দল ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।