নির্বাচনে কালক্ষেপণ হলে নতুন নতুন প্রশ্ন দেখা দিবে : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
নির্বাচনে কালক্ষেপণ হলে নতুন নতুন প্রশ্ন দেখা দিবে : রিজভী

 বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পুরুষের চাইতে নারীর মমত্ববোধ স্নেহ বোধ ভালোবাসা বেশি থাকে এটাই আমরা জানি, কিন্তু এমন এক নারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যার মধ্যে কোন মমত্ব, ভালোবাসা স্নেহ বলতে কিছুই ছিল না।  দেশটাকে সে জমিদারি মনে করতো, আর জমিদারি যাতে হাত ছাড়া না হয় সে জন্য গুম, খুন, মানুষ হত্যা করতে, তার বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে ন্যূনতম দ্বিধা করেননি। এটাই ছিল শেখ হাসিনার দর্শন অন্য কিছু নয়।  


শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা ডিগ্রি কলেজ মাঠে 'আমরা বিএনপি পরিবার' আয়োজিত চব্বিশের গণ-আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের শহীদ পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সহমর্মিতা প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। 


 বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও 'আমরা বিএনপি পরিবার'-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ আয়োজনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী থেকে যে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট করেছে তার আবার মায়া-মমতা কীসের। সে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল আরও বেশি লুট, আরও বেশি টাকা পাচার নিজের লোকদের দিয়ে করাতে। এটাই হচ্ছে তার রাজনৈতিক দর্শন, এটাই ছিল তার চিন্তাধারা। তার ওই ১৬ বছরের দুঃশাসনে বিদেশ থেকে ঋণ পেয়েছে প্রায় ১৮ লক্ষ্য ৬০ হাজার কোটি টাকা আর তার সময়ে টাকা পাচার হয়েছে ১৭ লক্ষ্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে তার মধ্যে দেশপ্রেম ছিল না, দেশের মানুষকে কখনোই ভালোবাসতো না। তার স্বপ্ন ছিল একটাই বাংলাদেশেকে আর্থিকভাবে দেউলিয়া করে যাওয়ার।


 তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ছলে বলে কৌশলে জুলুম করে, ক্রসফায়ার দিয়ে, গুম করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। আর ওই ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি নিশ্চিত করেছিল পার্শ্ববর্তী দেশ যেখানে তিনি এখন পালিয়ে আছেন, আশ্রয় পেয়েছেন। পৃথিবীর কোন দেশ, কোন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কেউ শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেনি, শুধু মাত্র পার্শ্ববর্তী দেশ তাকে সমর্থন করেছে।


 তিনি বলেন, তার মানসিকতায় কোন সহমর্মিতা নেই; কোন সহ অবস্থানে শেখ হাসিনা বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করে মারো, ধরো আর আমাকে ক্ষমতা দেও,  আমি ক্ষমতায় বসবো, কোন গণতন্ত্র বুঝি না, আইনের শাসন বুঝি না, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ কিছু বুঝি না একমাত্র স্বাধীনতা আমার।


উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ নেতারা কারি কারি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, ফরিদপুরের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুই হাজার কোটা পাচারের। একজন ছাত্রনেতা এটা পারে কীভাবে।  শেখ হাসিনা নিজেদের লোকদের লুটপাটের অধিকার দিয়েছেন, কীভাবে কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে টাকা মারতে হবে, কীভাবে বিদেশে টাকা পাচার করতে হবে, বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের লোকদের সেকেন্ড হোম বানাতে হবে এটাই তিনি দিয়েছেন।  জনগণের কি লাভ হলো, জনগণ কতটুকু পেলেন, সেদিকে তাকাননি।


 


শেখ হাসিনার এই ঋণের কারণে আজ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে তার কাধেও সোয়া ১ লাখ টাকার বোঝা চেপেছে। গোটা জাতিকে দেউলিয়াত্বের মধ্যে ফেলে দিয়ে তিনি আবারও নিজেদের ক্ষমতায় দেখতে চান।


রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ছিল আফ্রিকান মাগুর মাছের মতো। আফ্রিকান মাগুর পুকুরের মধ্যে যা পায় সব খেয়ে সাবাড় করে। ঠিক আওয়ামী লীগও ছিল আফ্রিকান মাগুর, তারা সবকিছু খেয়ে শেষ করে গোটা জাতিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে রেখে গেছে। তাদের এই অন্যায়, অবিচার, জুলুম, মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো লড়াই করেছে। সর্বশেষ জুলাই-আগষ্টের আন্দোলন, মহাবিপ্লবের মধ্য দিয়ে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।


তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে মানুষ শান্তি-সস্তি চায়। এখানে যেন আর কেউ ডাকাতি করতে না পারে, যুবলীগ-ছাত্রলীগ আর কারও দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করতে না পারে, কারও পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যেতে না পারে, কারও জায়গা-জমি দখল করতে না পারে সেটার নিশ্চয়তা চায় মানুষ। আর দুঃশাসন যাতে ফেরত না আসে সেটা নিশ্চিত করার জন্য যাকে সবাই সমর্থন দিয়েছেন সেই ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আরও তৎপরতার সাথে কাজ করতে হবে।


তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর পরও তেলের দাম বাড়ছে, এটা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সিন্ডিকেটবাজদের ধরতে হবে। ঢাকার বাজারে চাল, চিনি ডাল, আটা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ সবকিছুর দাম বাড়ছে।  এজন্য সিন্ডিকেট চক্র এবং চক্রের চক্রান্তকারীসহ শেখ হাসিনার দোসরদের ধরতে দেরি হচ্ছে বলে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। সিন্ডিকেট কারীদের গ্রেপ্তার করলে সবকিছুর দাম কমে যাবে বাজারে।


রিজভী বলেন, ভয়ংকর দুঃশাসন অতিক্রম করে আজ আমরা কিছুটা নিশ্বাস নেয়ার জায়গায় এসেছি। আমাদের আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে কারণ আমাদের মূল দায়িত্ব জনগণের শাসন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। আর সেটা নিশ্চিত করতেই হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে-তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর সেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ১৭ বছর পর প্রত্যেকটি মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এটা যদি দীর্ঘক্ষণ কাল ক্ষেপণ হয়, তাহলে আবার মানুষের মধ্যে নতুন নতুন প্রশ্ন দেখা দিবে। গত ১৬ বছর নিজেদের লোকজনকে লুটপাটের গণতন্ত্র দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জনগণের গণতন্ত্র হরণ করেছিলো তারা। এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।


 বক্তব্য শেষে জুলাই- আগষ্ট  গণঅভ্যুত্থানে বরিশাল বিভাগে ৩১  শহিদ পরিবারের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও  উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। এর আগে তিনি বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠী গ্রামে শহিদ আরিফুর রহমান রাসেলের কবর জিয়ারত করেন।


 আমরা বিএনপি পরিবার এর কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মানের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহাবুবুল হক নান্নু, বরিশাল জেলা বিএনপি দক্ষিণের আহবায়ক, সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খান,  বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক প্রমুখ।