আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাচেষ্টাসহ গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এবং পর্যায়ক্রমে তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, বুধবার (০৬ নভেম্বর) রাতে আমুকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে এবং তার রিমান্ডের জন্য আবেদন জানানো হবে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে। এর আগে, গত ১৮ আগস্ট আমির হোসেন আমুর ব্যাংক হিসাবসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউয়ের নির্দেশে তার ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হয়, যার মাধ্যমে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর রাজনৈতিক জীবন একসময় ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঝালকাঠি অঞ্চলের একাধিক দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা ধরনের সরকারি বরাদ্দ, ঠিকাদারি কাজ এবং নিয়োগের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। স্থানীয় নেতাদের মতে, তার আয়ের বেশিরভাগটাই এসেছে অবৈধ উপায়ে এবং সে অর্থ বেশিরভাগ সময়ই নগদে চলে আসত।
বিশেষ করে ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে আমির হোসেন আমুর ঝালকাঠির রোনালস্ রোডের বাসভবনে বস্তাভর্তি টাকা উদ্ধার করা হয়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তার বাসায় মজুদ করা এসব টাকা ছিল মোটা অঙ্কের, যার পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, সেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া, আমুর দুইটি প্রাসাদ এবং রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে একটি বড় বাড়ি রয়েছে, কিন্তু এসব সম্পত্তি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না, বরং নগদ লেনদেনের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হত।
আমির হোসেন আমু তার শ্যালিকা মেরী আক্তারের কন্যা সুমাইয়া হোসেনকে দীর্ঘদিন আগে পালক কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, এবং তিনি তার অবৈধ সম্পদ কিছু অংশ সুমাইয়ার কাছে পাঠাতেন, যা এখন দুবাইয়ে রয়েছে। তার অনুসারী ও সহযোগী ফখরুল মজিদ কিরনও একটি রহস্যময় চরিত্র হিসেবে পরিচিত, যিনি আমুর আর্থিক কাজকর্ম এবং নির্বাচনী এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
ঝালকাঠির স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমু ক্ষমতায় থাকাকালে আর এখনো তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। সব ধরণের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ কার্যক্রমের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে আরও কিছু নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা এই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেননি, তবে দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এবং বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবি করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।