সেই চাঁদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৫শে মে ২০২৩ ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
সেই চাঁদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় পুলিশ।


রিমান্ড শুনানি শেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মাহবুব আলম তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


রিমান্ড শুনানির পর আদালতে থাকা রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি জালাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


এর আগে গ্রেপ্তারের পর রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় দায়ের করা প্রথম মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।  


পুঠিয়ার শিবপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আবু সাঈদ চাঁদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছিল গত ২১ মে রাতে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। তবে গত ১৯ মে সমাবেশে হুমকি দিয়েই লাপাত্তা হন বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ঘটনার পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরের কোর্ট ভেড়িপাড়া মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে চাঁদকে আনা হয় এবং গ্রেপ্তারের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।


গ্রেপ্তার পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানার কোর্ট ভেড়িপাড়া মোড় দিয়ে পালানোর সময় একটি প্রাইভেটকার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই হুমকির ঘটনার পর আমাদের বিশেষ টিম গত কয়েক দিন ধরে আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তারের জন্য এ অভিযান অব্যাহত রেখেছিল।


তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য ছিল তিনি নগরীতেই অবস্থান করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ কোর্ট ভেড়িপাড়া মোড়ে তল্লাশি চালানোকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি গাড়িতে করে রাজশাহী নগরীর এক জায়গা থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান, রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনসহ আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


সংবাদ সম্মেলন শেষে চাঁদকে আদালতের মাধ্যমে দুপুরেই কারাগারে পাঠানোর কথা ছিল। তবে এমনটি জানানো হলেও পরে আদালতে তুলে চাঁদের নামে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির ঘটনায় তার নামে এখন পর্যন্ত মহানগরে চারটি ও জেলায় তিনটিসহ মোট সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে এখন পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।


এর আগে গত শুক্রবার (১৯ মে) রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। সমাবেশের শেষে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কবরস্থানে’ পাঠানোর হুমকি দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ। ওইদিন তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নেই। একদফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করব ইনশাআল্লাহ’।


তার এ বক্তব্যের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে রাজশাহীসহ গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। চাঁদকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাইয়ের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকরা। রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করা হয়।


বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকির ঘটনায় তার নামে সন্ত্রাস দমন আইনে পুঠিয়া থানায় প্রথম মামলা হয়।


তবে এর আগেও বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগে গত বছরের ২৬ জুলাই রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ ওরফে চাঁদের নামে মানহানির মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় জামিনে ছিলেন এ বিএনপি নেতা।