হাইকোর্টের নির্দেশনায় সভা-সমাবেশে তাজা গুলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৫ই মার্চ ২০২৫ ০৮:১২ অপরাহ্ন
হাইকোর্টের নির্দেশনায় সভা-সমাবেশে তাজা গুলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের হাইকোর্ট শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে উল্লেখ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা ছয় ছাত্র সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে এবং মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় তাজা গুলির ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আদালতের অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।


হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চ গত বছরের ৪ আগস্ট এ রায় দেন। রায়ে আদালত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সাত দফা নির্দেশনা প্রদান করেন, যা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে।


রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। বিচারপতি বলেন, ‘মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনের সময় মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করবে এবং তারা শুধুমাত্র কঠোর প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করবে।’


এছাড়া, রায়ে বলা হয়েছে, সমাবেশ বা মিছিল বেআইনি হলে পুলিশ সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিচারপতি আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের সময় সকল নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা করবে এবং কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা সমানভাবে সকল নাগরিকের জন্য থাকতে হবে।


রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট উল্লেখ করেন যে, তাজা গুলি ব্যবহার করা যাবে শুধুমাত্র তখনই, যখন আইন লঙ্ঘন বা দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারশেল ব্যবহার করতে পারে, তবে তাজা গুলি ব্যবহার করা যাবে না যদি পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকে। বিচারপতি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাজ করা উচিত।


এছাড়া, ছয় ছাত্র সমন্বয়কের অবৈধ হেফাজত নিয়ে রিটের দ্বিতীয় অংশ এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে, কারণ তারা ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। এই বিষয়ে আদালত জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে নতুন আদেশের প্রয়োজন নেই।


রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছিল। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এবং সাত দফা নির্দেশনা প্রদান করে রায় দিয়েছেন।