‘বিস্ময়’ ক্রিকেটারের নাম আলিস আল ইসলাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটার, অথচ তাকে মাশরাফি কিংবা রংপুর রাইডার্সের অন্য ক্রিকেটাররাও চিনতেন না! চেনার কথাও নয়। একদিন আগেও ছিলেন নেট বোলার। ঢাকা ডায়নামাইটসের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বোলিং করতেন। ম্যাচের আগের দিন অর্থাৎ পরশু সন্ধ্যায় দলে ডাক পান। আর গতকাল হ্যাটট্রিক করে মহানাটকের জন্ম দেন সাভারের আলিস আল ইসলাম। আল আমিন ও মোহাম্মদ সামীর পর তৃতীয় বোলার হিসেবে বিপিএলে হ্যাটট্রিক করেন বাংলাদেশের এই জাদুকরী বোলার! অবশ্য তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। প্রথম বিভাগ লিগে তার অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ ছিল। তবে তিনি সেটা দূরীভূত করেই খেলছেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা ডায়নামাইটসে সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে মিডিয়াকে আলিস বলেন, ‘আমি ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশনে খেলেছি। নেট বোলিং করার সময় সুজন (ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন) স্যার আমাকে দেখেন। দেখে ওনার বিশ্বাস হয় যে, আমি ভালো করতে পারব, তারপর আমাকে টিমে নেয়। তারপর টিম ম্যানেজমেন্ট, প্লেয়াররা আমাকে সাপোর্ট করে। তারপর আমি সেরা একাদশে।’ জীবনের প্রথম এত বড় আসরে হাজারো দর্শকের সামনে খেলছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা নার্ভাস ছিলেন। এ কারণে দুটি ক্যাচও মিস করেছেন। ডায়নামাইটসের দেওয়া ১৮৪ রানের পাহাড় টপকে রংপুর রাইডার্স যখন জয়ের সেলিব্রেশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই শুরু হয় আলিসের জাদু।
জয়ের জন্য মাশরাফিদের দরকার ১৮ বলে ২৬ রান। হাতে ৬ উইকেট। এমন সময় সাকিব বল তুলে দেন অচেনা আলিসের হাতে! প্রথম দুই বলে দুই সিলেঙ্গস। তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রংপুরের বিদেশি তারকা বেনী হাওয়েল। কিন্তু নিজের বলে নিজেই ক্যাচ মিস করেন আলিস। তারপর চতুর্থ বলে ফিরিয়ে দেন ৪৯ রানে ব্যাট করা রংপুরের সেট ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুনকে। পরের বলে বোল্ড করেন ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে। ওভারের শেষের বলে ফরহাদ রেজাকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। বিপিএলের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পর আলিস নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সবাই আসলে অনেক সাহস দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে যে, ভালো জায়গায় বলটা করতে পারলে তাহলে ভালো কিছু হতে পারে। আমি শুধু ভালো জায়গায় বল করতে চেয়েছি।’
শেষ ওভারেও নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিল। এক ওভারে রংপুরের দরকার ১৪ রান। আবারও সেই আলিস। প্রথম দুই বলেই দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ হাতের নাগালে নেন রাইডার্সের ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম সুহাস। জয়ের জন্য যখন শেষ চার বলে দরকার ছয় রান। তখন আলিস দিয়েছেন মাত্র তিন রান। ২ রানের স্বপ্নিল এক জয় তুলে নেয় ঢাকা ডায়নামাইটস। কাল আলিসের রূপকথাতেই যেন ম্লান হয়ে গেল কাইরন পোলার্ডের বীরত্ব। যেন অর্থহীন রংপুরের রিলে রুশো ও মোহাম্মদ মিথুনের দুর্দান্ত লড়াই। কাল ঢাকার ইনিংসে ঝড় তুলে ছিলেন পোলার্ড। মাত্র ২৬ বলে খেলেছেন ৬১ রানের সাইক্লোন ইনিংস। ক্যারিবীয় তারকার ঝড়ো ব্যাটিংয়েই দ্রুত চার উইকেট হারানোর পরও ঢাকা শেষ পর্যন্ত করেছিল ১৮৩ রানের পাহাড়সম স্কোর।
১৮৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ছক্কা হাঁকিয়ে গেইল তার উপস্থিতি জানান দেন। দ্বিতীয় ছক্কা হাঁকানোর সময়ই আউট হয়ে যান। অবশ্য ছক্কা প্রায় হয়েই গিয়েছিল! বাউন্ডারি রশির বাইরে লাফ দিয়ে শূন্যে থেকেই বল থ্রু করে মাঠে ভিতর রাখেন আন্দ্রে রাসেল। তারপর বল তালুবন্দী করে গেইলকে বিদায় কওে দেন পোলার্ড। গেইলের পর আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফকেও দ্রুত হারায় রংপুর। তবে এরপর রুশো ও মিথুন মিলে ১২১ রানের ঝড়ো পার্টনারশিপ গড়ে রাইডার্সকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। রুশো ৪৪ বলে খেলেন ৮৩ রানের ইনিংস। আর মিথুন করেছেন ৩৫ বলে ৪৯ রান। তবে তাদের ঝড়ো দুটি ইনিংসের পরও রংপুর জিততে পারেনি। ১৮১ রানে আটকে যায় রাইডার্সের ইনিংস। আলিসের রূপকথার বোলিংয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস পেয়ে যায় শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।