সন্তানকে কোলে নিয়ে 'ফিল্মী স্টাইলে' ধর্ষককে কুপিয়ে মারলেন নারী (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৫শে জুন ২০১৯ ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
সন্তানকে কোলে নিয়ে 'ফিল্মী স্টাইলে' ধর্ষককে কুপিয়ে মারলেন নারী (ভিডিও)

ঘড়ির কাঁটা তখন দশটা ছুঁইছুঁই। জনবহুল চৌরাস্তার মোড়। একটি মোটরসাইকেল থামে দোকানের সামনে। আর তাতে চড়ে আসেন আড়াইয়ের বছরের এক ছেলে সন্তানকে কোলে নিয়ে এক মা। তার সঙ্গী ছিলেন আরও দু’জন। নেমেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাদের। তার মধ্যে হঠাৎ করে ধারালো একটি ছুরি নিয়ে এক যুবকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই তরুণী। এলোপাথাড়ি কোপে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ওই যুবক। ঘটনাটি শুনে কোনো সিনামার গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবেই ঘটেছে এরকম ঘটনা। 

নিহত যুবক আসিফ গাজি (৩৪) বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা বসিরহাট জেলার ঝুড়ুলি গ্রাম লাগোয়া মেছো ভেড়ি এলাকাতেই থাকতেন তিনি। ওই এলাকায় মাছের ব্যবসা করতেন আসিফ। ঝুড়ুলি গ্রামেই বাস করতেন মারুফা বিবিও। তার স্বামী কলকাতার একটি হোটেলে কাজ করেন। পাঁচ বছরের ও আড়াই বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে ঝুড়ুলি গ্রামে থাকতেন ওই গৃহবধূ। কিছুদিন আগেই স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে আসিফ গাজি নামের ওই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে বলে তার অভিযোগ। আর এই ধর্ষণের বদলা নিতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাকে। আজ মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকালে মাটিয়ার খোলাপোতায় চৌরাস্তা মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আসিফ। কিছুক্ষণ পর অন্য একটি মোটরসাইকেলে চড়ে আসেন মারুফা। মোটরসাইকেলে মারুফার স্বামী ও অন্য এক যুবক ছিলেন। তার কোলে ছিল আড়াই বছরের ছেলেটি। পরে আসিফের সঙ্গে কথা বলতে যান মারুফা। কথা বলার এক পর্যায়ে মারুফা ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আসিফকে। আসিফকে মেরেই পালানোর চেষ্ট করেন মারুফা। কিন্তু ধরে ফেলেন স্থানীয় জনতা। শুরু হয় বেধড়ক মারধর। পরে পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে এবং নিহত আসিফের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর মারুফার শিশু সন্তানকে কোলে তুলে নেন ঘটনাস্থলে থাকা এক নারী। পরে আশেপাশের লোকজন শিশুটির কাছে জানতে চায় তার বাবা-মার নাম। কিন্তু আড়াই বছরের শিশু তখন আতঙ্কে চারদিকে তাকাচ্ছিল। সে সম্ভবত তার মাকে খুঁজছিল। ওই ঘটনার পর শিশুটির সর্বশেষ অবস্থান জানা জায়নি।  মারুফার শাশুড়ি বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই প্রায় পাগল হয়ে গেছিল আমার ছেলের বৌ। ধর্ষণের পরেই বারবার আসিফ আমার বৌমাকে হুমকি দিত।

আসিফ বলত, কাউকে জানালেই খুন করা হবে তার স্বামী ও দুই ছেলেকে। আজ আমার ছেলে বাড়ি আসার পর আসিফকে ডেকে পাঠায়। আসিফ পাল্টা তাদের খোলাপোতায় যেতে বলে। ওখানে এমন কাণ্ড ঘটে। বসিরহাটের এসডিপিও অশেষ মৌর্য ঘটনাস্থলে জানান, খুনের কথা স্বীকার করেছেন ওই তরুণী। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনের পিছনে সব কারণই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব