প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১১:৯
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও, শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় উভয় দেশ একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আপাতত সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা কমলেও, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এখনো বহাল রয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতির ফলে সমুদ্র, আকাশ ও স্থলপথে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে দুই দেশের সামরিক দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা এখনও অমীমাংসিত। ভারত এখনো ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক চুক্তিটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় করা এই চুক্তি পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানি দেশটির কয়েক কোটি মানুষের কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনের ওপর নির্ভর করে। চুক্তি স্থগিতের ফলে পাকিস্তানে পানির সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
চেনাব নদীর পরিস্থিতি বর্তমানে পাকিস্তানের জন্য এক মারাত্মক সংকেত। পাকিস্তানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে এই নদীর পানিপ্রবাহ ৩৫ হাজার কিউসেক থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৩ হাজার ১০০ কিউসেকে, যা নদীটির অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
পাঞ্জাব সেচ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত হঠাৎ করে একতরফাভাবে চেনাব নদী থেকে পানি প্রত্যাহার শুরু করে এবং প্রায় পুরো প্রবাহই আটকে দেয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভারত তাদের বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে পানি জমাচ্ছে এবং পাকিস্তানের অধিকার হরণ করছে।
এই অবস্থায় পাকিস্তানের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে। সিন্ধু চুক্তিকে আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ ও বাধ্যতামূলক হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, ভারতের পদক্ষেপ সেটিকে চ্যালেঞ্জ করছে।
দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, সিন্ধু পানিচুক্তি ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী আলোচনায় এই সংকটের কোনও ইতিবাচক সমাধান আসে কি না।