নৈতিকতা হল মানবিক আদর্শাবলীর একটি প্রণালী যা একটি সুখী জীবন লাভে আমাদের আচরণের নির্ধারক হয়। নৈতিকতা নিয়ে আমরা একটি সৎ জীবন-যাপন করি। আমাদের চারপাশের মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আস্থা অর্জনে তা আমাদের চালিত করে। সুখের চাবিকাঠি হল নৈতিকতা।আমাদের সমাজের নীতি-নৈতিকতা কেমন ছিল আর এখনকার সমাজের অবস্থানটা কোথায়? বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে উন্নত করতে পেরেছে, চরিত্রকে নয়। মানুষকে যান্ত্রিক করেছে, মানবিক নয়। যুগের চাহিদায় মানুষ পেয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। পুরো বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার। নৈতিকতা হ্রাস পেয়েছে।বর্তমান সময়ে মানুষ নৈতিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। অনৈতিকতার আবদ্ধ বেড়াজাল হতে বের হতে পারছে না মানুষ।কিন্তু কোনো একসময় তো সমাজের মানুষ এরকম হীনমন্য ছিলো না।
আজকের এই পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে যখন সেকালের পরিস্থিতি মেলাতে যাই তখন সত্যিই অবাক না হয়ে পারি না। আমাদের এক জীবনে শিক্ষার পরিবেশের এত অবনমন হবে, তা কখনো ভাবতেও পারিনি। আজ ছাত্র শিক্ষককে সম্মান করে না, শিক্ষক ছাত্রকে স্নেহ করেন না। শিক্ষা যেন অন্য যেকোনো পণ্যের মতো হয়ে উঠেছে। ব্যাপারটা এভাবে চলতে পারে না। সময় বদলায়, তার সঙ্গে মানুষও। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার কখনো বদলাতে পারে না। এটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনেও অনৈতিকতা ও আদর্শহীনতার ছোঁয়া লেগেছে। অন্যের সফলতা আমাদের সহ্য হয় না। তাই তো সুযোগ পেলেই কাউকে বিপদে ফেলতে এতটুকু দ্বিধা করি না। কারও বিপদে সাহায্য করি না। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখি। সেলফি তুলি, ভিডিও করি। যাঁরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ আবার এটাকে ব্যবসা বা ভিন্ন চোখে দেখেন। ফেসবুক/ইউটিউবে লাইভ করেন, অনুসারী বাড়ানোর জন্য।অন্যের নামে কুৎসা রটানো, অপদস্থ করা, রাস্তাঘাট ও গণপরিবহনে নারীদের কটূক্তি করা, তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে মারামারি, খুন—কোনোটিই বাদ পড়ছে না। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে আমিই ভালো, আমিই সব সবকিছু পাবো, সবকিছু আমারই হতে হবে, আমার থেকে অন্য কেউ ভালো থাকতে পারবে না, সেটা যেভাবেই হোক,আমার চেয়ে কেউ ভালো না ইত্যাদি।
সমাজের প্রত্যেকটি জায়গায় দুর্গন্ধের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নানা রকম অনৈতিক কার্যকলাপ। আমরা সবাই যদি আমাদের নিজের কাজটি সঠিকভাবে করি, তাহলেই নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে। সমাজের অন্যায়-দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। নিজে না করে অন্যকে প্রতিনিয়ত দোষারোপ করে কোনো সমাধান হবে না। এমন নয় যে আমরা বিবেকহীন, নীতিহীন, আদর্শবিহীন এক লোভী মানুষে পরিণত হয়েছি; যা থেকে আমরা নিজেরাই সরে আসতে চাই না? অনৈতিকতা থেকে সরে দাঁড়াতে হলে নিজের বোধ শক্তিকে জাগ্রত করতে হবে।তখনই একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে যখন কিনা আমাদের নিজেদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে।