বরিশালে প্রতিবারের মতো উপমহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শ্মশান দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সংক্ষিপ্ত পরিসর রাখায় এবার তোরণ ও আলোকসজ্জা করা হয়নি। নগরীর কাউনিয়াস্থ মহাশ্মশানে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে আগামীকাল শনিবার সকালে। মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাস্ক ছাড়া মহাশ্মশানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং শ্মশানের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক দুটি টানেল বসানো হয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সার্বক্ষণিক মাইকিং করা সহ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। উল্লেখ্য বরিশাল মহাশ্মশানে ১৯২৭ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে শ্মশান দীপাবলি উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবি, উপমহাদেশে এমন আয়োজন এটাই সবচেয়ে বৃহৎ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কালীপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানান খাবার। তিথি থাকা অবস্থায় সবকিছু করা হয়। এছাড়া সমাধির পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা। আর স্বজন না থাকা মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি জ্বালানো হয়। সকাল থেকে লোক সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্যার পর পূণ্যার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুডু জানান, ৫ একর ৯৬ শতাংশ জমিতে বরিশাল মহাশ্মশানের মধ্যে পুরনো শ্মশানের অধিকাংশ সমাধি ক্ষয়ে গেছে। তবে এখনও ব্রাক্ষ্মনদের দু-তিনটি সমাধি দেখা যায়।
জানা যায়, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দ দাশ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসি মা, শিক্ষাবিদ কালীচন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সমাধি আছে বরিশাল মহাশ্মশানে।নতুন ও পুরনো মিলিয়ে বরিশাল মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮০০ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন দেশে নেই।বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) খাইরুল আলম জানিয়েছেন, সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দীপাবলি উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে সব বাহিনীর সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও র্যাব সার্বক্ষণিক মহাশ্মশানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে।