ঘুমধুমে গৃহবধূ আত্নহত্যা করেনি,পরিকল্পিত হত্যার শিকার দাবী পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
ঘুমধুমে গৃহবধূ আত্নহত্যা করেনি,পরিকল্পিত হত্যার শিকার দাবী পরিবারের

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের উত্তর ঘুমধুম আজুখাইয়া এলাকায় গলায় ফাঁস দেওয়া নুর আয়েশা বেগম কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ করেছে নিহতের পৈত্রিক পরিবার।তাকে স্বামী নুরুল হক, শ্বাশুড়ি, শ্বশুর, ঝা,ভাসুর মিলে হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গলায় ফাঁস দিয়ে রশিতে ঝুলিয়ে রাখে,এমন অভিযোগ উত্তর ঘুমধুম এলাকায় চাউর হয়েছে।

পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরবর্তী প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে পারবে বলে জানান।তবে নিহত নুর আয়েশা বেগমের মাতা রাশেদা বেগম অভিযোগ করে জানান,বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে তাঁর মেয়েকে স্বামী নুরুল হক মারধর করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছিল।তাঁর শরীরে বহু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও দাবী করেছেন।খবর পেয়ে ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান প্রেরণ করে।হত্যা কিংবা আত্নহত্যার বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চালালেও স্থানীয় এক ইউপি সদস্য আসামী পক্ষ নেওয়ায় মামলা করতে পারিনি।

রাশেদা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমার মেয়ে নুর আয়েশা বেগমের সাথে প্রতিবেশী ছমির উদ্দিনের ছেলে নুরুল হকের সাথে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে বিয়ে হয় বিগত ৮ বছর পূর্বে।তাদের ঔরসজাত জিয়াউর রহমান নামের ৫ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।বিয়ের ৪ বছর পূর্বে সে অন্য নারীতে পরকিয়া আসক্ত হয়ে পড়ে।দাম্পত্য জীবনে নুরুল হক স্ত্রী নুর আয়েশা বেগম কে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল গত কয়েক বছর ধরে।এমনকি ভাতে-কাপড়ে জ্বালাপোড়া করে এক প্রকার অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে আসছিল।এরই ফাঁকে মোবাশ্বেরা নামের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী এলাকা থেকে এক নারীকে বিয়েও করে ঘরে উঠাইছিল।তখন নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়েই যায়।এক ছেলে সন্তানের ভবিষ্যত সুখের কথা চিন্তা করে সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে আসছিল নুর আয়েশা বেগম।

রাশেদা বেগম আরো জানান,তাঁর মেয়ে নুর আয়েশা বেগম কে প্রায়শই নির্যাতনের ঘটনা জামাতা নুরুল হকের বাবা ছমির উদ্দিন,মাতা ফাতেমা বেগম,ঝাঁ জুহুরা বেগম,ভাসুর আহমদ উল্লাহ ও পরিবারের সদস্য আক্কাস মিয়াকে অবগত করে প্রতিকার চাইলেও উল্টো নুরুল হকের পক্ষে সাফাই গেয়ে নুর আয়েশা বেগম কে তিরস্কার করতো।নুরুল হকের নির্যাতনের বিষয়ে পূর্ব থেকেই কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের আস্কারায় নুর আয়েশাকে অকালে মরতে হয়েছে বলে কান্না জড়িত কন্ঠে জানান রাশেদা বেগম।

শুক্রবার সরেজমিনে আজুখাইয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,নুরুল হকের ঘর মানুষ শুণ্য এবং তালাবদ্ধ।ঘটনার পর থেকে নুরুল হক পলাতক রয়েছে।তাঁর পিতার পরিবারের পুরুষ গুলো গাঁ ঢাকা দিয়েছে।ওই শত-শত নারী-পুরুষ নুরুল হকের পরিবারের অন্যায়ের কথা তুলে ধরেন।এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।নুর আয়েশা বেগম কে মারধর পূর্বক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে দাবী করে এ হত্যার ঘটনায় জড়িত ঘাতক নুরুল হক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার পূর্বক ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবী করেছেন নিহতের পিতার পরিবার ও এলাকাবাসি।

গত বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল এগারটায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। মহিলাটি কেনো গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করলো?কারণ কি উদঘাটন হবে কি?তড়িঘড়ি করে দাফন কার্যেরও প্রক্রিয়া চালিয়েছিলো? নুরুল হকের পরিবার।তাতে সহযোগিতা করে আসছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য।কি কারণে,কার জন্য,কে প্ররোচনা দিল তা উদঘাটন করার দাবী উঠছে এলাকায়।গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা প্ররোচনার জন্য কে দায়ী তা বের হবে কি? জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।নুর আয়েশা কি আত্নহত্যা করেছে? নাকি হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল? প্রশ্ন উঠেছে।এব্যাপারে ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন,ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবেনা।