প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ২৩:৫১
সরাইল- আশুগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি এডঃ জিয়াউল হক মূর্ধা নিজ সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু দেওয়া হল। আজ এডঃ জিয়াউল হক মৃর্ধা তাঁর ফেসবুকে লেখেন,মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্ব পুরুষগণের আত্মত্যাগের এবং আত্মোৎস্বর্গের মহিমায় উজ্জীবিত কোরবানীর ঈদ।পবিত্র ঈদুল আযহা আসন্ন।অন্যান্য বছরের মত ঈদের সেই আনন্দ উচ্ছাস নেই কারন বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের মরণ ছোবলে অর্থনীতি,রাজনীতি,ধর্ম-সংস্কৃতি সর্বত্র ই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এ মাস পবিত্র জ্বিলহ্জ মাস।পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মক্কা-মদিনায় লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভীড় জমায়।কিন্তু মহামারীর কারনে সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে হজ্ব ব্রত সৌদি-আরবের বাইরের কোন দেশকে আর হজ্বে সামিল হওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না যদিও আল্লাহ্ পাক মহা কোরানে মসজিদুল হারাম কে বাইতুল আমান অর্থাৎ নিরাপদ গৃহ হিসাবে এবং মদিনা নগরীকে নিরাপদ নগর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তবু ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার আলোকে এবং সংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত কোরান-হাদিস এবং ইসলামিক চিন্তা চেতনার আলোকে হ্জ্বকে সীমিত করা হয়েছে। সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী মসজিদ এবং সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে সীমিত সংখ্যক ধর্মার্থীর উপস্থিতিতে নামকা ওয়াস্তে উপসনালয় গুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।এবং সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক উপাসনালয় গুলো দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আইন এবং বাস্তবতা এক ঘরে বাস করে না।সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বড় বড় শহরের মসজিদ গুলোতে নামাজের ব্যবস্থা হলেও মফস্বলের উপসনালয়ের চিত্র ভিন্ন।আমি দেখেছি গ্রামে গন্জের মসজিদ গুলোতে করোনা ভাইরাসের ব্যাপ্তির আগে ওয়াক্তের নামাজে যে পরিমাণ মুসল্লী হত এখন তার পরিমাণ দ্বিগুণ-তিনগুণে দাড়িয়েছে।সামাজিক দূরত্বের আইন এখানে অসহায় হয়ে গেছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে মানুষের মৃত্যুর ভয় এবং মৃত্যু পরবর্তী পরকালের চিন্তা।মানুষের একটা বদ্ধমূল ধারণা মৃত্যু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এবং আল্লার ইচ্ছার এক মিনিট আগে বা পরে তা হবার নয়।
ভাইরাস আল্লাহর ইচ্ছা থেকে শক্তিশালী নয়।আর মৃত্যু ই যদি নিয়তির বিধান হয়ে থাকে তাহলে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে স্রষ্ঠার অনুগ্রহ প্রাপ্তি ই শ্রেয়।অনুরুপ ভাবে মৃতের জানাযার ক্ষেত্রে যদিও সীমিত সংখ্যক লোক জানাযায় অংশগ্রহণ করে সৎকারের কথা।কিন্তু কেবল মাত্র রাজধানী,বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহর গুলো ছাড়া এই বিধান মানা হয় না।অবশ্যই আগের মত এখন আর মাইকে মৃতের জানাযার দিনক্ষণ,স্থান প্রচার করা হয় না তবু মোবাইলে মোবাইলে ব্যপক প্রচার লাভ করে এবং সেক্ষেত্রে দেখা যায় জানাযার উপস্থিতি যথা পূর্বং তথা পরং।
আমাদের সরাইল উপজেলার বেড়তলায় মরহুম হাফেজ মৌলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর বিশাল জানাযাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক বিদায় নিতে হয়েছে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,তদন্ত কর্মকর্তা,সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেলকে এরপরও জানাযায় জনতার ব্যাপক উপস্তিতি থেমে থাকেনি।কিছু দিন আগে করোনায় আক্রান্ত চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান জনাব শাজাহানের জানাযায় দেখলাম চার-পাঁচ হাজার মানুষের উপস্তিতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিই জানাযা সম্পন্ন হয়েছে।সকলেই জানতেন শাজাহান সাহেব করোনায় আক্রান্ত কিন্তু তার নিকট জনের কেউ কেউ বলেন মৃত্যুর তিন-চারদিন আগে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে আর অতি কাছের একজন শিক্ষিত সচেতন লোক বলেছেন যে,
তার পারিবারিক সূত্রে নাকি জেনেছেন যে মৃত্যুর এক ঘন্টা পরে নেগেটিভ রিপোর্ট পরিবার পরিজনের হস্তগত হয়েছে।আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে,চুন্টা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বৃদ্ধা' ''মাতার" স্বাভাবিক মৃত্যু হয় শাজাহান চেয়ারম্যানের মৃত্যুর একসপ্তাহ আগে।মহিলার জানাযা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুলিশ দুবারে সম্পন্ন করেছেন।আইন প্রয়োগে বৈষম্য জনগণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।যাক বলছিলাম ঈদ প্রসঙ্গে।ঈদুল ফিতরের নামাজ ও মাঠে পড়তে দেওয়া হয়নি মসজিদে পড়তে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু মুসুল্লিদের উপড়ে পড়া ভিড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কোন ব্যবস্থাই ছিল না।সবশেষে আসি পশুর হাট প্রসঙ্গে। প্রত্যেকটা পশুর হাট জনাকীর্ণ,
শতকরা৭০ জনের অধিক ক্রেতা বিক্রেতা মাস্ক বিছিন্ন,নির্ধারিত সামাজিক দূরত্বতো দূরের কথা তিল ধারণের ক্ষমতা থাকে না হাট গুলোতে। আমি যে কথাটা বলতে চাই যদি মসজিদে,জানাযায়, বাজারে, শহরে,পশুর হাটে সামাজিক দূরত্বের আইন লঙ্গন করে জনতার বিশাল সমাবেশ ঘটে তা হলে খোলা মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে দোষ কি?
কেন আমরা পরিত্যক্ত করছি একতা ও মৈত্রীর মিলন কেন্দ্র ঈদগাহ গুলো কে? এমতাবস্থায় যে ঈদগাহে বিশ হাজার মুসল্লির সমাগম হয় সেখানে আট দশ হাজার মুসল্লি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিশ্চয়ই নামায আদায় করলে কোন দোষ দেখিনা।হাটে বাজারে,মসজিদে,জানাযায় সর্বত্র যদি জনতার উপড়ে পড়া ভিড় থাকে সেখানে ঈদগাহ থেকে বাধা নিষেধ প্রত্যাহার করাই সঙ্গত।আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বলি।