গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আধুনিক উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের সুফল ভোগ করছে মানুষ। এদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রতারকের সংখ্যাও। নিত্য নতুন কৌশলে তারা প্রতারণা করে যাচ্ছে। প্রতারকদের নানা কৌশলে অনেক মানুষ অনায়াসেই তাদের খপ্পড়ে পড়ে হচ্ছেন নিঃস্ব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেলিব্রেটিদের ছবি দিয়ে লটারী/অর্থ উপহারের নামে প্রতারণা করছে প্রতারকরা। সর্বশেষ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেফারেন্স দিয়ে একটি প্রতারক চক্র প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। প্রতারকদের খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে জনগণকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শুধু দেশই নয়, বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারছে সাধারণ মানুষ। এতে একদিকে যেমন সময় ও ভোগান্তি কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে কর্মসংস্থানও। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ফ্রিল্যান্সিং, টেলিকনফারেন্স, ই-ফাইলিং, ই-ট্রাকিং, ই-কমার্স, নিরাপত্তা ও সংস্কৃতিসহ প্রতিটি মৌলিক ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক শ্রেনীর প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। লটারীতে পুরস্কার জেতা, নগদ অর্থ উপহার, নামী দামী মোবাইল সেট উপহার দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস আ্যাপ, বিকাশ নাম্বারে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অনেক সময় সচেতন মানুষও প্রতারিত হয়ে সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতে পারছেন না।
প্রতারক চক্র বিভিন্ন ফেসবুক গ্র“পের মাধ্যমে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। এমনকি তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য নগদ অর্থ পুরস্কার জিতেছেন এমন ডকুমেন্টও (ছবি) প্রকাশ করছে। যা দেখে অনেকেই এই প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ছেন। বর্তমান বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে এ ধরণের পোস্টগুলো বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেফারেন্স দিয়ে নতুন একটি প্রতারণামূলক পোষ্ট দেখা গেছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক সবার বিকাশ একাউন্টে ৪০০০ টাকা করে দিচ্ছে বোনাস হিসেবে।” বোনাস পেতে ওই প্রচারণায় একটি লিংক দেয়া হয়েছে http://eid-5ca6fo.ingress-alpha.easywp.com/ ওই লিংকে ঢুকে দেখা গেছে, নাম, বিকাশ নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার চাওয়া হয়।
এছাড়া ওই লিংকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি নিচে বিঃদ্রঃ আকারে লেখা রয়েছে, সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিতঃ অর্থ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকলে এ ধরণের কোন নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি। মূলত সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ওই প্রতারক চক্রের উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নজরুল হুদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, “এ ধরণের কোন প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ধরণের প্রতারণার বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। তবে এ বিষয়ে তিনি বোর্ড সেক্রেটারীকে বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ শাখায় যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা যেমন: সমুদ্র পথে বিদেশ যাত্রা, মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম কার্ড প্রতারণা, অনলাইন শপিং প্রতারণা, একাউন্ট হ্যাকিং প্রতারণা, লটারী বা পুরস্কার জেতা প্রতারণা, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের নিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক হওয়া, গোপনীয়তা বা ব্যক্তিগত কন্টেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জরুরী সেবা ৯৯৯ এবং পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পশুর হাটে নগদ টাকা লেনদেন,
জালটাকার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে জনগণতে সচেতন হওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে দেশের সাধারণ মানুষকে ধোকা দিতে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে প্রতারক চক্র। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় প্রতিদিনই এ ধরণের প্রতারক চক্র গ্রেফতার হলেও তাদের দৌড়াত্ম্য কিন্তু কমছে না।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) বলেন, এটা শুধুমাত্র বরিশালের ইস্যু না, এটা সমগ্র দেশেরই ইস্যু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটা কোথা থেকে করা হচ্ছে তা সেন্ট্রাল থেকে চিহ্নিত করা হবে। তবে প্রযুক্তিগত যে পদ্ধতি আছে সেটা করার জন্য আমরা চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, “আমাদের বরিশালে কেউ যদি এ প্রতারণার সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাকে ধরার জন্য আমরা বিএমপি সহযোগিতা করবো”। এছাড়া তিনি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট এর এডিশনাল আইজিপি কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এ ধরণের প্রতারকদের খপ্পড় থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে জনগণকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।উল্লেখ্য বর্তমানে প্রায় ১৩ লক্ষাধিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পেশাজীবী এবং ১০ সহস্রাধিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্বনির্ভর হয়েছেন এবং প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছেন তারা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে আউটসোর্সিংয়ে ২য় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ১৬ শতাংশই বাংলাদেশের।
ডিজিটাল সরকার, নাগরিকদের ডিজিটাল সেবা প্রদান, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক মনবসম্পদ উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের প্রসার এ চারটি মূল লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। মূলত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত করাই ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের মূল্য লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস উদ্যোগে এ প্রোগ্রামের আওতায় দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে পাঁচ সহস্রাধিক ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় দুইশ’ ধরণের ফ্রি ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সময়োপযোগী নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন মাইলফলক স্থাপন হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গভর্নমেন্ট পোর্টাল চালু করতে সক্ষম হয়েছে আমাদের দেশ। বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার ওয়েবসাইটকে একই প্লাটফর্মে এনে সহজেই তথ্য সেবা দেয়ার কাজ করা যাচ্ছে। এসব উদ্যোগের কারণে ইতিমধ্যে বহু সম্মাননা ও স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত এক দশকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশের অভূতপূর্ব অর্জনের বিষয়টি দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি লাভ করেছে।স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের নতুন পরিচয় নির্মাণ করেছিলেন। তারই সুযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাড়াবে এমন প্রত্যাশা দেশের আপামর জনগণের।