ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক মাদ্রাসা কর্মচারীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা, সেই ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা রাঢ়ি এবং একই ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহীদ দেওয়ানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মধ্য খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিম্নমান সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. শহীদুল ইসলামকে লাঠি, জুতা ও ঝাড়ু ব্যবহার করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরিয়ে মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে এবং বরিশাল জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।
উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যের অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদেরকে নিজ নিজ পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত সদস্যদের পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়েছে। যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, তাদেরকে কেন চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না? আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে এর জবাব পাঠাতেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার এক ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা কর্মচারী শহীদুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে জমা হয়। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামও। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর বাবা মাদ্রাসায় এসে শহীদুল ইসলামকে মারধর করেন। তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি গত বুধবার (৩ জুন) বিকালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই নিয়ে সালিশ বৈঠক করেন।
সেখানে শহীদুল ইসলামকে গালিগালাজ করে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ২০ হাজার টাকা মাফ করে বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ দেয়া হয়। শহীদুল জরিমানার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধর করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে স্থানীয় স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। বিষয়টি চেয়ারম্যানের লোকজন মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে ভাইরাল হয়।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকালে লাঞ্ছিত শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।এদিকে বরিশাল পুলিশের পক্ষ থেকে ওই মাদ্রাসাকর্মী ও ইমামকে সম্মানিত করা হয়েছে। পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সোমবার বাড়িতে গিয়ে তার মাথায় সম্মানজনক টুপি পরিয়ে দেয় এবং অন্যান্য গিফটসামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পাবে বলে নির্যাতিত মাদ্রাসাকর্মীকে জানায় পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।