দারিদ্রকে হার মানিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন শিক্ষার্থী। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী ইসমাইল ও কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শামীম এবং রায়হান এ অসাধ্য সাধন করেছেন। এমন ফলাফলে পরিবার-স্বজন, প্রতিবেশী ও শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটলেও তারা ভবিষ্যৎ লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত। দ্রারিদ্রতাই তাদের স্বপ্নে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মো. ইসমাইল:
ইসমাইলের বাড়ি বোহানউদ্দিন পৌরসভার দুই নাম্বার ওয়ার্ডে। তাঁর বাবা আ. মান্নান নিজের ২০ শতক ও ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করেন। পাঁচ মেয়ে,দুই ছেলে নিয়ে তার বড় পরিবার। তবে মেয়ে লাইজু , মিনজু, সালমা, শারমিন ও ফাতেমার বিয়ে হয়ে গেছে। ইসমাইলের ছোট ভাই ইসরাফিল একই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। ইসমাইলের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ আবু নোমান জানান, ইসমাইলের মেধাশক্তি অসাধারণ। ইসমাইলের মা আ. মান্নান ও মা জরিনা বেগম জানান, ইসমাইলকে নিয়ে তাঁদের অনেক আশা-ভরসা। যতই কষ্ট হোক তাঁকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। তাঁরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, যদি টাকার অভাবে ওর পড়াশোনা থেমে যায় তাহলে কিইবা করার থাকবে। ইসমাইল জানান, সে প্রাইভেট পড়েনি। কোন যায়গায় সমস্যা হলে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো. আব্বাসের শরনাপন্ন হতেন। ইসমাইল ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখে।
শামীমের বাড়ি উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের আট নাম্বার ওয়ার্ডের পাওয়ার প্লান্ট সংলগ্ন নদীয়ার চরে। বাবা মো. মোস্তফা ঢাকায় কামরাঙ্গির চরের হাজারীবাগে কুলির কাজ করতেন। গত দেড় বছর ধরে ডান হাত ও বা-পায়ে বোধশক্তি পাচ্ছেন না। প্রায় এক যুগ আগে গঙ্গাপুরে তেঁতুলিয়া নদী বসত ভিটা কেঁড়ে নেয়ার পর এ এলাকায় আট শতক জমি কিনে নতুন বসতী গড়েন। এখন কিছু জমি বর্গা নিয়ে স্ত্রী রহিমা বেগম আর সন্তানের সহায়তায় কৃষি কাজ করে কোনমতে সংসার চালান। সন্তানদের পিছনে কিছু ব্যয় করেন। শামীমের ছোট ভাই শাহীন, দুই বোন সাথি আক্তার ও সাদিয়া আক্তার স্থানীয় উদয়ন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাক্রমে চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শামীমের বাবা মো. মোস্তফা জানান, সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তবে কি পর্যন্ত পাবন তা ভবিষ্যতই বলতে পারে। শামীম জানান, তাঁদের স্কুলের সহকারী শিক্ষক বিশ^জিৎ স্যার নানাভাবে তাঁদের সহায়তা করেছেন। শামীমের শিক্ষক বিশ^জিৎ দে জানান, পরিচর্চা পেলে এ ছেলে অনেকদূর যাবে। শামীম ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন দেখে।
মো. রায়হান:
মো. রায়হান বোরহানউদ্দিন পৌরসভার নয় নাম্বার ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের দিনমজুর মো. শফিকের ছেলে। সে ঢাকার নবাবপুর এলাকায় দোকানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। তাঁর মাত্র দুুুুুুুুুুুুুুুুুুুই শতাংশের ঘরভিটা ছাড়া নিজের জমি বলতে কিছু নেই। দুই ভাই- বোনের মধ্যে রায়হান বড়। ছোট বোন সাদিয়া একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। রায়হানের মা মায়ানুর বেগম জানান, তার এ ছেলেটি মেধাবী। ইচ্ছা আছে যতদূর ও পড়তে চায় পড়াবেন। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেলে কিছুই করার থাকবেনা। রায়হানের স্কুলের শিক্ষক মাকসুদুর রহমান পিন্টু জানান, মেধা আর পরিশ্রমী এ ছেলেটি যত্ন পেলে অনেক ভালো করবে। রায়হান জানান,বিশ^জিৎ স্যারের অংক-বিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগীতা ভোলার মত নয়। তাঁ স্বপ্ন ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হবার।