পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে, চাপ সৃষ্টি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২১শে মার্চ ২০২০ ০১:১৯ অপরাহ্ন
পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে, চাপ সৃষ্টি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে খাদ্য সংকট হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনায় আতঙ্কিত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। উহানে ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে ১৭০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে সাড়ে ১১ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ।প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশেরও করোনা শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২০ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সংকট তৈরি হতে পারে এজন্য মানুষ বেশি করে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করায় কয়েক দিনের ব্যবধানে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।শনিবার ভোট দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার কারণে দেশের জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। সেজন্য আতঙ্কিত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আতঙ্কগ্রস্ত। তারা সমানে খাবার জিনিস কিনে মুজদ করছেন।

আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমাদের খাদ্যদ্রব্যের কোনো সমস্যা নাই। এখনও ১৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য সরকারি গুদামেই মজুদ আছে। সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন গম আমাদের মজুদ আছে। বেসরকারি রাইস মিলের কাছেও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুত আছে। সারা বাংলাদেশের বড় কৃষকদের কাছেও ধান, চাল মজুদ আছে। তাছাড়া আমাদের ক্ষেতে ফসল আছে, কৃষক ফসল বুনছে। তরকারি, শাক-সবজি আমাদের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের লবণ উৎপাদন প্রচুর হচ্ছে। একজনকে দেখলাম তিনি বলেছেন তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনে রেখেছেন। এটা কতদিন খাবেন তা আমি জানি না। সেটা দিয়ে তিনি করবেন। আর পেঁয়াজের একবার দাম বাড়ার ফলে অনেকে প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মজুদ করেছিলেন। ফলাফল এই হয়েছিল যে পেঁয়াজগুলো পঁচে যাওয়াতে তা ফেলে দিতে হয়েছিল।’

‘আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন। এই কারণে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে বাজার জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে যার টাকা আছে সে হয়তো কিনতে পারছেন কিন্তু যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য তো এত কেনা সম্ভব না, তাদের কষ্ট হয়ে যায়। অন্যকে এভাবে কষ্ট দেয়ার অধিকার কারও নাই। সেক্ষেত্রে আমি বলবো আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এটা নজরদারিতে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষের প্রতিও আহ্বান জানোবো আপনারা নজরদারিতে রাখেন। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজারের উপর চাপ সৃষ্টি করা, আর জিনিসপত্রের মজুদ করোই করা উচিত না। কাজেই সবাই স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, সবই আছে।’-যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সকলের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে রিজার্ভ আছে তাতে আগামী এক বছরের খাবার ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকেও দুঃচিন্তা করার কোন কারণ নাই।’জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সকলকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে কাপড় দিয়ে নাক ঢেকে রাখতে হবে বা কনুই দিয়ে হাতটা ডেকে রাখা অথবা যেখানে সেখানে না যাওয়া। আর বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না। কারণ আপনিতো নিজে সংক্রামিত হতে পারেন, নিজের পরিবারকে করবেন আবার আরও ১০জনের মাঝে ছড়াবেন। কাজেই অন্যর জীবনকে এভাবে বিপদগ্রস্ত করা মোটেই সমীচীন নয়। সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এটাই চাই।’

যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যারা গ্রামে যাচ্ছেন তারা একটা কাজ করতে পারেন, নিজের মাটি আছে, তাতে ফসল ফলান। তরকারি লাগন। সকলেই ভিটামিন সি বেশি করে খাবেন। এখন ভিটামিন সির অনেক কিছুই বাজারে আছে। টমেটো, কমলালেবু, মৌসুমী ফল, টক জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়া। এটা প্রচুর খেলে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক শক্তি শরীরের মাঝে জমা হবে।বাহিরে অযথা না ঘোরার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাহিরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকেন। আর নিজেকে, পরিবার ও সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখেন। সেটাই আমি আশা করি। সবাই ঘরে বসেই দোয়া করেন, যাতে এই রোগ থেকে মানবজাতি মুক্তি পায়।’

ইনিউজ ৭১/ জি.হা