বরিশালে এটুআই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনীহা সরকারি কর্মকর্তাদের (পর্ব-৪)
সরকারি সেবা প্রদানের প্রচলিত দৃশ্যপট বদলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের দোরগোড়ায় সস্তায়, সহজে, দ্রুত, স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত সেবা পৌঁছে দেয়াই ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন “একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)” প্রোগ্রাম দেশব্যাপী নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে বরিশালে। কেননা এখানে বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ব্যতীত অন্য কোন দফতরের ওয়েব সাইট হালনাগাদ নেই। বরিশালের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে নিয়োগ-বদলি ছাড়া অন্য কোনও তথ্য হালনাগাদ নেই। কোন কোন দফতরে আবার কর্মকর্তা বদলী কিংবা প্রমোশনজনিত কারণে অন্যত্র চলে গেলেও সে তথ্য আপডেট নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কোন কোন দফতরের অফিস প্রধান কোনদিন তার প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে ঢুকেও দেখেননি। কেউবা আবার তার দফতরের ওয়েব সাইট সম্পর্কে অবগতই নন বলে জানিয়েছেন। কেউবা আবার লোকবলের সংকট থাকার কথা জানিয়েছেন। বরিশালের সরকারি দফতরগুলোর ওয়েব সাইট নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ৪র্থ পর্বে আজ থাকছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বরিশাল।
সারা বাংলাদেশে মাদকের ভয়াল ছোবলে আজকের যুব সমাজ ধ্বংসের দাড়প্রান্তে দাড়িয়ে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় মাদক বিক্রেতা, মাদকসেবী আটক এবং বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। দেশের যুব সমাজ তথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় বর্তমানে সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এ কারণে সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যাদের ভিশন হচ্ছে মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। আর মিশন হচ্ছে, দেশে মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি, অবৈধ মাদক বিক্রয় বন্ধে সমন্বিত অভিযান জোরদারকরণ এবং মাদকাসক্তের চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহার ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা। আর সেই মিশন ভিশন সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
এ দফতরটি ওয়েব সাইটে সা¤প্রতিক কর্মকান্ডে উল্লেখ রয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা, মাদক মামলা দায়ের, মাদক মামলা তদন্ত, এফআইআর দাখিল, চার্জশীট দাখিল, মাদক সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে অবৈধ মাদক ব্যাবসায়ীদের তালিকা তৈরী, বিজ্ঞ আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদান, রাজস্ব আদায়, বেসরকারী নিরাময় কেন্দ্রের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা প্রদান, মাদকবিরোধী গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা, নারকোটিক্স ড্রাগস এন্ড প্রিকারসর কেমিক্যাল কন্ট্রোল, এ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্যাদির নিয়ন্ত্রণ। তাদের অর্জনও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু তাদের ওয়েব সাইটে ঢুকলে দেখা যায়, ২০১৭ সালের পর আর কোন অর্জন নেই তাদের (!) অথচ তাদের ওয়েব সাইটি সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তাহলে এ দু’বছরে তাদের অর্জন শূন্য (!) কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)’ প্রোগ্রামের আওতায় বরিশালে এ দফতরটির ওয়েব সাইটটি হালনাগাদ নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফর বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক এএএম হাফিজুর রহমান‘র সাথে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, সরকার আমাদের যে ওয়েব সাইট দিয়েছে তা আমাদের হেড অফিসের মানে অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে আপডেট হয়। তবে বরিশালের এ দফতরটির ওয়েব সাইট হালনাগাদ না থাকার বিষয়ে বলেন, লোকজন ছিল না, ট্রেনিংয়ে আছেন। এছাড়া কিছু ট্যাকনিক্যাল সমস্যা আছে ওয়েব সাইটে। মূল সমস্যা হচ্ছে লোকবল। এটা আসলে খুব বেশি মেজর সমস্যা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ কাজ করলে সমস্যা থাকবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে সব ধরণের তথ্য আপনারা পাবেন। (সাক্ষাতকারটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নেয়া। তবে গতকাল রবিবার (১৫ মার্চ) দফতরটি ওয়েব সাইটে ঢুকলে তখনও সেই আগের অবস্থায়ই রয়েছে দেখা যায়।)
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান জানিয়েছেন, প্রতি মাসের আইসিটি সভায় এগুলো বলা হয়। সব সময় সকল প্রতিষ্ঠানকে ওয়েব সাইট হালনাগাদ করতে বলা হচ্ছে। তাছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান যদি ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে সমস্যায় পড়ে তাহলে জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়।
বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দফতর থেকে এগুলো মনিটরিং করা হলেও সব তথ্য আমাদের কাছে আসে না। এজন্য তিনি সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমরা সকল দফতরে প্রায় ৪৩ হাজার ওয়েব সাইট তৈরী করেছি। যা একটি অফিস থেকে মনিটরিং করার সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্ব স্ব দফতর প্রধান অফিস এগুলো মনিটরিং করবে। একজন সাধারণ মানুষের তথ্যের প্রয়োজন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবিনেট মিটিংয়ে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দফতরকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। জনগণকে সেবা দেয়ার জন্যই আমাদের প্রচেষ্টা সেখানে যদি কেউ গাফিলতি করে তা দুঃখজনক বলেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগো যুগ্ম সচিব ড. মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন প্রতি মিনিটে প্রত্যেকটি অফিসের ওয়েব সাইট আপডেট করার কথা। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের “ভিশন ২০২১” ইশতেহার প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতের সম্মাজনক ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডাব্লিউএসআইএস) পুরস্কার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটির চূড়ান্ত পর্যায়ের পুরস্কার পেল। অথচ এটুআই প্রকল্প বাস্তবায়নে বরিশালের সরকারি অফিসগুলোতে কর্মকর্তাদের অনীহা থাকায় এ প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না এ এলাকার মানুষ।
সূত্রে জানা যায়, এটুআই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আর এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯৩.৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল শেষ হলেও এখনো বরিশালে এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি দফতরগুলোতে হালনাগাদ তথ্য না থাকায় হতাশ হতে হয় সাধারণ নাগরিকদের।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।