বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। দেশের ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও মাদ্রাসাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে। এমনকি সাম্প্রতিক চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ অসীম ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের মানুষের এ ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের এক জরিপের বরাতে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪.১%) মনে করছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আগের সরকারের চেয়ে বেশি সুরক্ষা দিচ্ছে। এই মনোভাব দেশের মানুষের সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রমাণ।
প্রসঙ্গত, গত দুর্গাপূজার সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কোনো ধরনের হামলা বা সহিংসতার ঘটনা রোধে সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ছাত্র সংগঠনগুলি মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছে, এবং মাদ্রাসাগুলির পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, তারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক দলগুলিও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় যে, তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করবে।
তবে, সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যেখানে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে পুরো দেশ, এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যা ইসকন নেতা চিন্ময়ের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ঘটে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রশ্ন উঠিয়েছে। তবে, এ ঘটনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুসলমানরা এবং অন্যান্য সম্প্রদায় নির্বিচারে সহিংসতার বিরুদ্ধে ধৈর্য দেখিয়েছে, যা দেশের সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও মানবিকতার প্রতীক।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল মন্তব্য করেন যে, *ভারত* অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, যদিও তার নিজ দেশের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নির্মমতা ও অত্যাচারের ঘটনা চলছে। তিনি ভারতের এই দ্বিচারিতার কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, “ভারতের এ ধরনের অবস্থান নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।”
এভাবেই, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিত হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এবং এটি দেশের ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি শক্তিশালী প্রতীক।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।