
প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:২২

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সি-ব্লকে রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে কাঁচাবাজার, যা স্থানীয়দের কাছে ‘বউবাজার’ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, এই বাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা। এ ছাড়া পাশের বি-ব্লকের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটের (তালতলা মার্কেট) পার্কিংয়ের জায়গায়ও হাজার হাজার দোকান বসিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। চক্রটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের ধরে নিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য নির্যাতনও করেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং থানা করে ‘বউবাজার’। পুলিশও এই চাঁদাবাজ চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান জুয়েল ও তার ভাই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খান রাসেল।
সম্প্রতি খিলগাঁও এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, তালতলা মার্কেটের বিপরীত দিকে রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে কাঁচাবাজার, যার নাম ‘সি-ব্লক বউবাজার’। মূলত চাঁদাবাজি করার জন্যই এই বাজার বসানো হয়েছে। এর কোনো অনুমোদন নেই। বছরের পর বছর ধরে সেখানে চলছে চাঁদাবাজি। এখন প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই বাজারের কারণে চরম দুর্ভোগও পোহাতে হয় স্থানীয়দের। খিলগাঁও সি-ব্লকের গৃহবধূ আফসানা বেগম জানান, সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মহাবিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাড়ির সামনের রাস্তায় কাঁচাবাজার বসায় গাড়ি বা রিকশা চলা তো দূরের কথা, হাঁটাও যায় না। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে দুপুর দুই-আড়াইটা পর্যন্ত রাস্তা দখল করে বেচাকেনা চলে। বাজারের দুর্গন্ধে আশপাশের বাসাবাড়িতে এখন বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দা ও বউবাজারের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নূরুজ্জামান জুয়েল ও তার লোকজন বউবাজারের আড়াই শর বেশি দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন।
মাছ বিক্রেতা হারুন জানান, দোকান বসানোর জন্য প্রতিদিন তিনি ১৫০ টাকা করে চাঁদা দেন। শুক্রবার দিতে হয় ২০০ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েলের লোকজন এই চাঁদা তোলে। প্রতি দোকানদারকে বাধ্যতামূলক টাকা দিতে হয়। সবজি বিক্রেতা আমির হোসেন জানান, তার দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়।
খিলগাঁও তালতলা ডিএনসিসি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারটিতে তেমন কোনো ক্রেতা নেই। সবজি ও মাছের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। দু-একজন দোকান খুললেও ক্রেতা নেই। দোকানিরা জানান, তাদের সিটি করপোরেশনে ভাড়া ও ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। রাস্তায় যারা দোকান বসায় তারা সরকারকে কোনো ট্যাক্স বা ভাড়া দেয় না। দলীয় নেতাকর্মীদের কিছু টাকা দিলেই তাদের চলে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী বাজার ছেড়ে রাস্তায় গিয়ে বসেছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা জানান, তালতলা সুপার মার্কেটের ভেতরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় প্রায় হাজারখানেক দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকান থেকে নিয়মতি চাঁদা নেয় নূরুজ্জামান জুয়েলের লোকজন। মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। প্রতিটি দোকানকে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিয়ে সেখানে দোকানদারি করার কোনো সুযোগ নেই। ফুটপাতের দোকান থেকেও সালামির নামে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়া হয়। এসব দোকানের কারণে লোকজন গাড়ি নিয়ে মার্কেটে আসতে পারেন না। এর বাইরে স্থানীয় গার্মেন্টসগুলোর ঝুটের ব্যবসা, ডিশ-ইন্টারনেট মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা ও মাদক কারবারের টাকাও নেয় জুয়েলের লোকজন। স্থানীয়রা জানান, নূরুজ্জামান জুয়েলের ছোট ভাই খান রাসেল একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদের মেজ ভাই খান সোহেল এলাকার মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। মাদকের মামলায় কিছু দিন আগেও কারাভোগ করে সোহেল।
রাস্তায় কাঁচাবাজার বসানো প্রসঙ্গে জানতে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল বলেন, ‘যারা এখানে ব্যবসা করেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। এখান থেকে কেউ আর্থিক সুবিধা নেয় না। কেউ আর্থিক সুবিধা নিক তা আমি চাই না।’ বাজারটি বসাতে সহযোগিতা করেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটিতে লোকজনের যাতায়াত কম। এখানে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো নেই। হকাররা সকালে বসে দুপুরে উঠে যায়। তা ছাড়া এ রাস্তা দিয়ে সাধারণত গাড়ি চলাচল করে না। কয়েকটি বাড়ির লোকজন যাতায়াত করে। তারা বাজারের ওপর দিয়েই হেঁটে যেতে পারেন।’

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন জানান, তিনি কাউন্সিলর হওয়ার বহু আগে থেকেই রাস্তায় এই বউবাজার বসছে। প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট দিয়ে দুবার বাজারটি উচ্ছেদ করিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে আবার দোকান বসে যায়।
খিলগাঁও থানার ওসি মসিউর রহমান বলেন, ‘অবৈধ কাঁচাবাজারের কারণে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। বাজার উচ্ছেদ করে রাস্তা খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক বাধার কারণে বাজারটি উচ্ছেদ করতে পারিনি। এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাজারটি উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইনিউজ৭১/জিয়া