বছরের পর বছর হাতি আতংকে নির্ঘুম রাত কাটে রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকার জনসাধারণ। সম্প্রতি দুটি বন্যহাতি লোকালয়েও প্রবেশ করেছিল। তবে উপজেলার কোদালা, পদুয়া, সরফভাটা, শিলক সহ চন্দ্রঘোনা রাইখালী এলাকায় প্রতিরাতে হানা দিচ্ছে বন্যহাতির পাল। খাবারের সন্ধানে প্রতিরাতে এসব হাতির পাল হানা দিচ্ছে বলে জানান এসব এলাকার মানুষ। জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে রাঙ্গুনিয়ার পাশ্ববর্তী কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা রাইখালী ও রাঙ্গুনিয়ার পূর্ব কোদালা এলাকার লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির পাল। গত কয়েকদিনে এসব এলাকার ৮/১০ গ্রামে হাতির দল একাধিক কৃষকের ক্ষেত-খামারের হাজার হাজার টাকার সম্পদ সাবাড় করেছে। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা বন্য হাতি সাধারন মানুষকে আক্রমণ করছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় রাইখালীর ডংনালা গ্রামের নিজ বাসার সামনেই বন্যহাতির আক্রমনের শিকার হন রাইখালীর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন (৪২)। এসময় নাছিরের মাথা, বুকে ও পিঠে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ডংনালা এলাকার পল্লী চিকিৎসক দোকান বন্ধ করে রাতে বাড়ি ফেরার পথে সড়কের পাশে পার্শ্ববতী জঙ্গল হতে বন্যহাতির আক্রমনে নামার পাড়ার ছোথোয়াইপ্রু মারমার পুত্র রেমংপ্রু মারমা (৪০) উপর হামলা করে। এসময় তার আর্তচিৎকারে গ্রামের লোকজন ছুঁটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করে।
ডংনালা গ্রামের অংজাবাই মারমা বলেন, সন্ধ্যা নামলেই পাহাড় থেকে বন্য হাতির দল লোকালয়ে ছুঁটে আসছে। রাইখালী ডংনালা, তংসি পাড়া, হাতিমারা মুখপাড়া, খাসিভাঙ্গা, কোদালা, কারিগড়পাড়া, রাইখালী সহ একাধিক গ্রামে বন্য হাতির আক্রমণ বৃদ্বি পেয়েছে। প্রতিরাতে গ্রামের কৃষকদের কলা, জাম্বুরা, কচি বাঁশ কোঁড়ল, মসল্লা জাতীয় আদা হলুদ সহ বিভিন্ন কৃষিপন্য পায়ে পিষ্ট ও সাবাড় করে ফেলছে। বন্য হাতির দল কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে এবং মালামাল তছনছ করছে।
গ্রামবাসী জানায়, দলছুট একটি বন্যহাতি সরাসরি মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে। বনজঙ্গলের পাশে অবস্থান নিয়ে রাতের আঁধারে সাধারন মানুষের উপর আক্রমণ করছে। গত এক বছরে রাইখালী এলাকায় বেপরোয়া বন্যহাতির আক্রমনে একাধিক মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছেন। সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিরাতে ইউনিয়নের জঙ্গল সরফভাটা এলাকায় বন্য হাতির পাল তান্ডব চালায়। সম্প্রতি দুটি বন্য হাতি পাহাড় থেকে কয়েক মাইল দূরে লোকালয়েও চলে এসেছিল। তবে বন অধিদপ্তরের তৎপরতায় তারা কোন ক্ষতি না করলেও গত কয়েবছর হাতির আক্রমনে স্থানীয়দের সম্পদ ও প্রাণ হানির একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে।’
রাইখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক বলেন, গত কয়েকদিনে বন্য হাতির দল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কৃষকের হাজার হাজার টাকার কৃষিপণ্য নষ্ট ও সাবাড় করে ফেলছে। রাতের আধাঁরে সাধারন মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে। বন্য হাতির লোকালয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলেও বন বিভাগের কার্যকারী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সাধারন মানুষের সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগ তথা সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্থানীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, রির্জাভ এলাকা কমে যাওয়া এবং পাহাড়ে খাদ্যের সংকটের কারনে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতির দল। উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় বলেন, ‘পাহাড়ে হাতির নিরাপদ আবাস্থল ও খাদ্যের সংকটের কারণে তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে লোকালয়ে হানা দেয়। পাহাড়ে হাতির নিরাপদ আবাস্থল ও পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দেওয়া গেলে লোকালয়ে হাতির আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।