আরামবাগ ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন এমন ১৯ নেপালি পালিয়ে গেছেন। বুধবার রাতে তিন পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় তারা পালিয়েছেন- এমন প্রমাণ মিলেছে সেগুনবাগিচা এলাকার একটি ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজে। রমনা বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এর সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বুধবার রাতে ফকিরাপুলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান চালায় র্যাব। ওই রাতে (সাড়ে ১০টার দিকে) সাদা পোশাকের তিনজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে সেগুনবাগিচার ৬/সি ভবনের পাঁচতলায় যান। তাদের মধ্যে প্যান্ট-শার্ট ইন করা একজনের হাতে ওয়াকিটকিও ছিল। ভবনের ৫ তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন কয়েকজন নেপালি। ভেতরে প্রবেশের ঘণ্টাখানেক পর রাত ১১টা ২৮ মিনিটে বেরিয়ে যান পুলিশ পরিচয় দেয়া তিনজন।
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনজনের একজন হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাগ উপরে উঠার সময়ে তার হাতে ছিল না। এর কিছুক্ষণ পরে ওই ফ্ল্যাটে গেস্ট পরিচয় দিয়ে আরও কয়েকজন নেপালি ঢোকেন। ফ্ল্যাট থেকে রাত ৩টার কিছু আগে একে একে বেরিয়ে যান ১৯ নেপালি। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মামুন বলেন, ‘সাদা পোশাক পরিচয় দেয়া পুলিশ যাওয়ার পর কয়েকজন এ ফ্ল্যাটে আসেন। এরপর তারা রাতে একসঙ্গে বেরিয়ে যান।’ ভবন মালিক বেলায়েত বলেন, ‘৫ তলার ফ্ল্যাটটি মোহামেডান ক্লাবের পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন মাসুদ নামের একজন। ওই রাতে পুলিশ সিভিল ড্রেসে এসেছিল। নিরাপত্তাকর্মীকে সঙ্গে নেয়নি। পুলিশ চলে গেলে ওরা ভোররাতে পালিয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে মাসুদ জানান, যেসব নেপালি মোহামেডান ক্লাবসহ অন্যান্য ক্যাসিনো পরিচালনায় কাজ করতেন তাদের দেখভাল করতেন তিনি। শুধু সেগুনবাগিচা নয়, রাজধানীর বনানী, গুলশানসহ একশ’র বেশি নেপালি সম্পর্কে জানতেন মাসুদ। রোববার মোহামেডান ক্লাবে অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে ক্লাবটিতে ১৯ নেপালি কাজ করতেন। এদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- সুরেশ সৃস্থা, সানু বাবু সাহী, রাধা কৃষ্ণ সৃস্থা, পাদামা সওদ, সুরাজ নাগাত্রী, নিরোজ ও নাগীন। পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি আজিমুল হক জানিয়েছেন, নেপালিদের পালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ১৩ নেপালি। গার্মেন্ট প্রোডাক্টের ব্যবসার কথা বলে ভিসা নিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ক্লাবের ক্যাসিনোর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্বরত ছিলেন এ নেপালিরা। নেপালিরা মাসে ৬০০ ডলার (৫১ হাজার ৩০০ টাকা) থেকে শুরু করে ১ হাজার ডলার (৮৫ হাজার ৫০০ টাকা) পর্যন্ত বেতন পেতেন।
মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিক বলেন, ‘অভিযানের সময় আমরা ১৩ নেপালির কাজ করার কাগজপত্র পেয়েছি। তাদের ভিসা আবেদনপত্র, নামের লিস্ট ও সেলারি লিস্টসহ আরও কাগজপত্র পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ১৩ নেপালি ক্যাসিনোটি পরিচালনা করতেন।’ রাজধানীর ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি র্যাবের অভিযানে প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ক্যাসিনোর ‘ক’ও জানত না।
অথচ সেগুনবাগিচার ওই ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরায় যে ফুটেজ পাওয়া গেছে তাতে প্রমাণিত জুয়া যারা পরিচালনা করত, তাদের কথা শুধু পুলিশ জানতই না তাদের পাহারাও দিত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।