একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে সেখানে আওয়ামী লীগের ৬৭ নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩ জন মন্ত্রী এবং ২৭ জন এমপি রয়েছেন। এছাড়াও সাবেক মন্ত্রী এবং এমপি রয়েছেন ৩০ জন। ৭ জন রয়েছেন প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাকর্মী। এই ৬৭ জনের যে তালিকা তার মধ্যে অঙ্গ সহযোগি এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোকে রাখা হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগি এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের আরো ৯৩ জনের বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নজরদারীতে আছেন।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের যে ৬৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভার সদস্য রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার বাণিজ্যে মদদ ও সহায়তা করা ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও একজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন থানার ওসি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ। বর্তমান মন্ত্রিসভার ৩ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমি দখলের অভিযোগ। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে টেন্ডারকাজে সহায়তা করার অভিযোগ। অন্য একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের ২৭ জন এমপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা, সন্ত্রাসে মদদ দেওয়া, টেন্ডারবাজদের সহায়তা করা এবং বিভিন্ন পেশী শক্তির মাধ্যমে জমি দখল এবং সম্পদ দখলের তথ্যপ্রমাণাদি গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। অন্য নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী, যারা নিজেদের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে। টেন্ডার, সন্ত্রাস এবং স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জানা গেছে যে, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট অভিযোগের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে সরকার একটুকু কার্পণ্যও করবে না।
যদিও আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের প্রথম পর্যায়ে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগই আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নীতিনির্ধারকেরা বলছেন যে, ছাত্রলীগ যুবলীগ দিয়ে শুরু হলেও এই অভিযান শুধু ছাত্রলীগ বা যুবলীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। একটি সুর্নির্দিষ্ট তালিকার মাধ্যমে অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। যেখানেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৫ শতাধিক ব্যক্তির নানা অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ৬৭ জন এবং অঙ্গসংগঠনের ৯৩ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালিত হবে না, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যারা মদদ দিয়েছেন, যারা তাদের এসব অনিয়ম, অপকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যারা সহযোগিতা করেছেন বা জড়িত ছিলেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে এই অভিযান কতদিন চলবে সে বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সুর্নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এই শুদ্ধি অভিযানের একটি সুর্নির্দিষ্ট রূপরেখা পাওয়া যাবে। আগামী বিজয় দিবসের আগেই এই শুদ্ধি অভিযানের ইতিবাচক ফলাফলগুলো মানুষ পেতে শুরু করবে। দেশের মানুষের মধ্যে এই শুদ্ধি অভিযান নিয়ে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে এগিয়ে চলা। নিজের দলের আগাছা পরিস্কার করে সবার কাছে তিনি একটি বার্তা দিতে চান যে, দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তার ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। আগামী মুজিববর্ষের আগেই একটি নতুন ইমেজের আওয়ামী লীগ যেমন দাঁড় করাতে চান, তেমনি বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের বার্তাটি দেশে এবং বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। সেই লক্ষ্যেই কারো প্রতি কোনো সহানুভূতি না দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।