৩৪৫০ রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রস্তুত প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক
শ.ম.গফুর , উপজেলা প্রতিনিধি উখিয়া- কক্সবাজার
প্রকাশিত: বুধবার ২১শে আগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
৩৪৫০ রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রস্তুত প্রশাসন

কক্সবাজারের শিবিরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ঘিরে দফায় দফায় বৈঠক, ট্রানজিট ঘাট প্রস্তুত, ক্যাম্প থেকে ঘাট পর্যন্ত নিরাপত্তা নিয়ে রূপরেখা তৈরিতে ব্যস্ত প্রশাসন। তবে যাদের ঘিরে এত আয়োজন সেই সব রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নেতা সাঁফ বলেই দিয়েছেন,তাঁরা তখনই যাবেন, যখন নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।তাই প্রত্যাবাসন নিয়ে এদেশের প্রশাসন প্রস্তুত থাকলেও,স্থানীয়দের মাঝে ধোয়াশা রয়েছে।আসলেই ২২ আগষ্ট রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরছে কিনা?

অন্যদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলছেন, রোহিঙ্গাদের শেষ পর্যন্ত বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।গত রোববার (১৮ আগস্ট) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে ডেকে এনে শরণার্থী কমিশনার বৈঠক ডাকেন রোহিঙ্গা টাস্কফোর্স কমিটির। এরপর প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দফায় দফায় স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও,আইএনজিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনার। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে টেকনাফের শালবাগান, জাদিমোরা, লেদা ক্যাম্পে তৈরি করা হয় বৈঠকখানা। কেরুনতলী জেটিঘাটে শুরু হয় ধোয়ামোছার কাজ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।যে সমস্ত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে প্রশাসনের এত প্রস্তুতি, তাদের নেতাদের মুখে ছিল ভিন্ন সুর। শালবন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, তাদের আওতাধীন তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে রাজি নন।

নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-২ ব্লকের হেড মাঝি সৈয়দুল আমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমাদের নির্যাতনের বিচার ও নাগরিক অধিকার না দেওয়া পর্যন্ত জোর করে মিয়ানমারে নিয়ে যেতে পারবে না। প্রয়োজনে এ দেশে গুলি করে হত্যা করা হোক, তাতে আমরা খুশি। এ দেশে অন্তত আমাদের মৃতদেহ জানাজা ও কবরের একটা জায়গা পাবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ মিয়ানমার, সে দেশে আমরা জন্ম নিয়েছি। সেখানে আমাদের অনেকের মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। অনেক মা-বোনকে নির্যাতন করেছে। বাড়িঘর, গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় কোন উপায় না পেয়ে মুসলিম দেশ হিসাবে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মাঝে যেন শান্তি ফিরে আসে সে জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে বহির্বিশ্ব আমাদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে।

একই সুর আরেক মাঝি সুলতান মিয়ার কণ্ঠেও। তিনি বলেন, সিদ্ধান্তবিহীন মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন নিয়ে মতামত দিয়ে কী হবে? আমরা তো আলোচনার মাধ্যমে যেতে চাই। কিন্তু মিয়ানমার তা মানছে না। মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই। বাংলাদেশে আর পালিয়ে আসতে চাই না। নিজ দেশের নাগরিকত্ব, অধিকার, ফেলে আসা সম্পদ, ভিটা-বাড়ি এবং জীবনের সুরক্ষার নিশ্চিয়তা ফেলে স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত আমরা।শুধু শালবন নয়, লেদা ক্যাম্প, আলিখালি, জাদিমোরা ক্যাম্প থেকেও তালিকায় আসা রোহিঙ্গাদের মনোভাব বোঝা গেল প্রায় একই রকম। তারা বলছেন, আগে দাবিপূরণ তারপর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রত্যাবাসন স্থলপথে করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। প্রতিদিন তিনশো করে রোহিঙ্গাদের দেশে পাঠানো হবে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ২২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। এ কার্যক্রম ঘিরে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যদি তারা স্বেচ্ছায় যেতে রাজি না হয় তাহলে কিছুই সম্ভব নয়। তবে এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সক্রিয় রয়েছি। অন্যদিকে মঙ্গলবারের মতো বুধবারও (২১ আগস্ট) শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের মতামত নেওয়ার কার্যক্রম। মঙ্গলবার ২১ পরিবারের ১০৫ রোহিঙ্গার মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে মতামত দিতেও অনীহা প্রকাশ করছেন রোহিঙ্গারা। এ রিপোর্ট (সাড়ে ৩টা) লিখাকালীন পর্যন্ত স্বাক্ষাতকার চলছিল।

ইনিউজ ৭১/এম.আর