বিএমপি পুলিশের তৎপরতায় ২৪ ঘন্টায় খুনের রহস্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: রবিবার ৪ঠা আগস্ট ২০১৯ ০৯:০৪ অপরাহ্ন
বিএমপি পুলিশের তৎপরতায় ২৪ ঘন্টায় খুনের রহস্য উন্মোচন

ঠিকাদারের চুরি খবর ফাঁস করায় গলাকেটে হত্যা করা হয় পিকআপ চালক উজ্জলকে। হত্যার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনের রহস্য উন্মোচন করলো বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। যার মরদেহ গত ২ আগস্ট (শুক্রবার) বরিশাল নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের কাশিপুরে নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার কাঁশবনের ভেতরে বালুচাপা অবস্থায় উদ্ধার করে বিমানবন্দর থানা ‍পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পরপরই অভিযানে নেমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উজ্জল হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান অভিযুক্তসহ তিন জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তারা। গ্রেফতারকৃতরা হলো: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ফুলঝুড়ি এলাকার জালাল হাওলাদারের ছেলে সোহাগ, মিনি ট্রাকের হেলপার রমজান এবং নির্মাণ শ্রমিক মাদারীপুরের কালকিনি এলাকার ইদ্রিস ফকিরের ছেলে রবিউল। ঘাতকদের আটক করে আজ বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিএমপির কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম)।

তিনি জানান, চুরির টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কোন্দলের শুরু। আর মাত্র ৩০০ টাকার হিসেব নিয়ে খুন হন উজ্জল। এ ঘটনায় মূল ঘাতক ট্রাক টার্মিনালের সাব-কন্ট্রাকটর সোহাগ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মূল কন্ট্রাকটর স্বপনের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালের কাজ করতো আলেকান্দার বাসিন্দা সোহাগ। এছাড়াও নিহত উজ্জল, রমজান ও রেজাউল একসাথে চলাফেরা করতো। এরা ট্রাক টার্মিনালের রড, সিমেন্ট, পাথর ও অন্যান্য মালামাল বিভিন্ন সময়ে সোহাগের নেতৃত্বে চুরি করে উজ্জলের পিকআপ ভ্যানে করে বিক্রি করতো। এমন চুরির ব্যবসা দীর্ঘদিন চলে আসছিল।

এরমধ্যে ভাড়া বাবদ ১৫০০ টাকা উজ্জলের কাছে ঋণী হয় সোহাগ। যদিও তার মধ্যে ১২০০ টাকা পরিশোধ করে। বাকি ৩০০ টাকা পাওনা থাকায় বিভিন্ন সময় চাইলেও ফেরত দেয় না সোহাগ। কয়েকমাস এই টাকা নিয়ে ঘুরালে ক্ষিপ্ত হয়ে কন্ট্রাকটর স্বপনের কাছে চুরির বিষয়টি ফাঁস করে দেন উজ্জল। এমন তথ্য জানতে পেরে কন্ট্রাকটর স্বপন সাব কন্ট্রাকটর সোহাগের ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। এতে পিকআপ চালক উজ্জলের ওপর ক্ষুব্ধ হন মূল ঘাতক সোহাগ।

পরিকল্পনা করেন উজ্জলকে হত্যার। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে দুইবার টাইগারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতে সফল না হওয়ায় নিজ হাতে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় ভয়ংকর কিলার সোহাগ। তারই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মোবাইলে উজ্জলকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালের নির্মানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডেকে নেয় সোহাগ। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহাগের সহযোগী টার্মিনালের শ্রমিক রবিউল ও ট্রাক হেলপার রমজান ছিল। উজ্জল যাওয়ায় তাকে চেয়ারে বসিয়ে কথা বলতে থাকে রমজান ও রবিউল।

এসময়ে পিছন দিক থেকে এসে ছোরা দিয়ে গলায় পোচ দেয় সোহাগ। এতে উজ্জল মাটিতে লুটিয়ে পরে। তখন রমজান ও রবিউল গলাকাটা উজ্জলের মাথা ও পা চেপে ধরে। ওদিকে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছোরা দিয়ে গলা কাটতে থাকে সোহাগ। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সোহাগ আলেকান্দার বাসায় চলে আসে। সেখান থেকে রক্তমাখা জামাকাপড় পাল্টে আবার ফিরে যায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে। সেখানে সোহাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বালু খুড়ে গর্ত করে রাখে রমজান ও রবিউল। সোহাগ গিয়ে তিনজনে মিলে তাদের ব্যবহৃত একটি কাঁথা মুড়িয়ে নিহত উজ্জলকে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরের দিন ছেলের কোন খোঁজ না পেয়ে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে আসেন উজ্জলের মা পারভীন বেগম। তিনি বালুর উপরে উজ্জলের একটি জুতা পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে বালু চাপা উজ্জলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২ আগস্ট অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায় মামলা করেন পারভীন বেগম। মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নেমে প্রথমে আলেকান্দা বাসা থেকে সোহাগকে গ্রেফতার করেন এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল ও এসআই এনামুল হক সহ সংগীয় ফোর্সরা। তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যা ঘটনায় জড়িত রমজান ও রবিউলকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এয়ারপোর্ট থানার এসআই এনামুল হক, এএসআই আউয়াল, কালাম, আবু সালেহ, সহ পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ সন্ধ্যায় আটককৃত আসামীরা বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব