নরসিংদীর পলাশে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার নেতৃত্বে ডাঙ্গা ইউনিয়ন জুড়ে রমরমা মাদক ব্যবসা ও ডাঙ্গা-গাজীপুরের কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে প্রকাশ্যে চলছে মালবাহী নৌযানে ব্যাপক চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ছোটখাটো ট্রলারসহ বড়বড় মালবাহী জাহাজও। প্রতিটি নৌযান থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌযানের চালকদের মারধরসহ মালামাল লুটের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে নৌপথে চাঁদাবাজি হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নীরব ভূমিকায়। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখছেনা বলে অভিযোগ করেন অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা।
অপরদিকে ডাঙ্গা ইউনিয়ন জুড়ে ইয়াবা,গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ ভয়ঙ্কও সব মাদক ব্যবসা চলছে জমজমাট। মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই একজন মাদক বিক্রেতাকে আটক করলেও বড় বড় গডফাদাররা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। জানা যায়, ডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি কামাল হোসেন (কালা কামাল) এর নেতৃত্বে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ২০ থেকে ২৫ জনের মাদক বিক্রেতার প্রতিনিধি কাজ করে। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর এই পথ দিয়ে প্রতিদিন শতশত মালবাহী জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করছে। ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা, প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেশবন্ধু সুগার মিল, জনতা জুটমিল, ক্যাপিটাল পেপার মিল, সেভেন রিং সিমেন্টসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান পলাশ ও কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পণ্য ও কাচাঁমাল নৌপথে আনা-নেওয়া হয়। চাঁদাবাজদের হামলা ও লুটপাটের শিকার হতে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের নৌযান চালকদের।
এ ছাড়া নৌ পথ দিয়ে আসা বাশ, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার আটকিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পলাশের ডাঙ্গা ও কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে নিয়মিত যাতায়াতরত কয়েকটি মালবাহী চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর একদল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌযান আটকিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বাহিনীর লোকজন লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আরিফুল ইসলাম, রবিউল মিয়া ও শামীন আহম্মেদসহ একাধিক ট্রলার চালকের সাথে কথা বললে তারা জানান, দেলু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাইহু সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর সাথের ঘাটের পাশে একটি টিনের ঘরে বিদেশি পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থন করে। কোনো জাহাজ ও ট্রলার আসতে দেখলেই তারা অস্ত্র হাতে পিছন থেকে একটি ট্রলার নিয়ে ১৫ জন যুবকের সন্ত্রাসী বাহিনী ওইসব ট্রলার ও জাহাজে উঠে চাঁদা দাবী করে। তাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দিলে চালকদের মারধরসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালীগঞ্জ ও ডাঙ্গা নৌঘাটের এক মাঝি জানান, দেলু বাহিনীর আয়নাল, লিটন ও বাবুলসহ ১০ থেকে ১৫ জন লোক তাইহু সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর গুদারাঘাটের পাশে তাদেরই তৈরি একটি টিনের ঘরে অবস্থান নিয়ে থাকে। দূর থেকে মালবাহী কোনো নৌযান এ পথে আসতে দেখলেই ট্রলার নিয়ে হানা দেয়। অনেক সময় নৌযান চালকদের চিৎকার শুনতে পাই। কিন্তু সন্ত্রাসী দেলু বাহিনীর ভয়ে কেউ সাহস করে এগিয়ে আসতে চায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, কালা কামাল ও দেলু মিলে একক আদিপত্য চালায় এই ইউনিয়নে । বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাসহ হাত-পা ভেঙে দেয়। এই দুই জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা এলাকার নিরিহ মানুষের জমি জবরদখল, নৌ পথে চাঁদাবাজি ও ইউনিয়ন জুড়ে মাদক ব্যবসা সহ এমন কোনো অবৈধ কাজ নেই যা তারা করে না। এসব নৈরাজ্য করে দুজনই প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে ডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (এএসআই) সাকলাইন বলেন, নৌ পথে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশ ক্যাম্পের সাথেই একজন ছিল তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।