মুরগী বিক্রেতা থেকে ইয়াবার উছিলায় কোটিপতি মোস্তাক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে মে ২০১৯ ০২:১৮ অপরাহ্ন
মুরগী বিক্রেতা থেকে ইয়াবার উছিলায় কোটিপতি মোস্তাক

এক সময়ের আনসার সদস্য,মুরগী বিক্রেতা থেকে ইয়াবা কারবারি।নিজের ভাগ্য ফেরাতে বহু অনৈতিক ব্যবসা করেছে মোস্তাক। যেভাবে তার বসত বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ।
ইয়াবা ও মানবপাচারের ডজন খানেক মামলার আসামী উখিয়ার পাশ্ববর্তী রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের মেম্বার মোস্তাক আহম্মদের বসত বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে রামু থানা পুলিশ। এসময় বাড়ির সব মালামাল ক্রোক করা হয় এবং বাড়িটি সীল গালা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা। সোমবার ২৭ মে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে তারা সোমবার সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবুল মনছুর এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশ সদস্যরা খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার,শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারী মোস্তাক আহম্মদের পূর্বগোয়ালিয়াস্থ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এসময় ইয়াবার টাকায় গড়া, বাড়ির মালামাল, ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ থেকে শুরু করে তার সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয় এবং বাড়িটি সীলগালা কর দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সুত্র নিশ্চিত করেছে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবুল মনছুর অভিযানের সত্যতা শিকার করে বলেন, ঢাকা মেট্টোপলিটন ( ডিএমপি) পুলিশ এর কলাবাগান থানার মামলা নাম্বার ৯(১০)১৮ ধারা ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর ১৯ (১) এর -৯(খ) /২৫ এবং জি আর মামলা নং- ১১৪৫/১৮ইং এর ক্রোক পরোয়ানা জারি করে আদালত। আদালতের ক্রোক পরোয়ানার জের ধরে কক্সবাজার জেলার রামু থানার পূর্ব গোয়ালিয়াপালংয়ের আস্কর মিয়ার ছেলে মোস্তাক আহমদের বাড়ি থেকে সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।তিনি আরো জানান, সব মালামাল মিনি ট্রাক যোগে (ডাম্পার) রামু থানা হফোজতে নিয়ে আসা হয়েছে।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল মনছুর আরো জানান, আসামী মোস্তাকের বিরুদ্ধে রামু, কক্সবাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৩টির অধিক ইয়াবা মামলা রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, মোস্তাক আহামদ মুরগীর ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচার করে খুবই অল্পদিনের মাথায় কোটিপতির খাতায় নাম লিখেন। গত কয়েক বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচিত হন ইউপি সদস্য। গড়ে তুলে কোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়ি। ইয়াবার পাচারে জড়িত থাকায় একরে পর এক তার বিরুদ্ধে শুরু হয় ইয়াবা মামলা। এরপরেও রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।

বিশেষ করে ২০১৮ সালরে ৮ ও ১৩ অক্টোবর দুই দফায় ঢাকায় র‌্যাব ও পুলিশের হাতে মোস্তাকের সহযোগীরা ইয়াবা সহ আটক হলওে পালিয়ে রক্ষা পান গডফাদার মোস্তাক। এঘটনায় মামলা হয় মোস্তাকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার রয়েছে বেশ কয়েকটি ফিশিং বোট। এসব বোট দিয়ে মানবপাচার করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায় এই মোস্তাক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে দরিদ্র বাবার টাকায় অল্প পড়াশোনা করে আনসার বাহিনীতে যোগ দেন মোস্তাক। ছোটবেলা থেকেই লোভী প্রকৃতির ছিলেন তিনি। এ কারণইে মাত্র তিন বছরের মাথায় ছেড়ে দেন অল্প বেতনের আনসারের চাকরি। এরপর তার বড় ভাই মনসুররে হাত ধর মিয়ানমারের চোরাই পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। মরিচ্যা বাজার এক সময় ছিলো চোরাইপণ্য পাচাররে ঘাটি। শুরু থেকেই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে চোরাই পথে কাপড়, আচার, বিয়ার, মদসহ নানা পণ্য নিয়ে আসে। টানা এক বছর চোরাই পণ্যের কারবার করে সীমান্তের সকল অবৈধ পথ চিহ্নিত করনে। এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা পাচারে। এতে শুরু হয় উত্থান। বাড়তে থাকে সম্পদ আর মামলা সংখ্যা।

ঢাকার মোহাম্মদপূর থানার (ওসি)জামাল উদ্দিন মির জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর র‌্যাব বসিলা মডেল টাউনের একটি ফ্লাটে ইয়াবা ব্যবসায়ীর আস্তানায় অভিযান চালায়। এই সময় সিন্ডিকেটের প্রধান মোস্তাক ও প্রধান সহযোগি ওমর ফারুক পালিয়ে গেলে গ্রেপ্তার হন নুরুল আমিন ও আবদুল করিম নামের মোস্তাকের দুই সহযোগী । তাদেরকে ১০ হাজার ইয়াবা সহ আটক করা হয়। এই সময় জব্ধ করা হয় ইয়াবা ব্যবসার ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই ঘটনায় আটক দুইজন ও গডফাদার মোস্তাক সহ ওই সিন্ডিকেটের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধ মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন র‌্যাব।

র‌্যাবরে হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও থামনি মোস্তাকের ইয়াবা ব্যবসা। ৫ দিনের মাথায় ১৩ অক্টোবর আবার যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি মামলা হয়। যাত্রাবাড়ী থানার (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, গত বছর ১৩ অক্টোবর রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপ বাগ মাঠের পাশে র‌্যাব অভিযাস চালালে ইয়াবা গডফাদার মোস্তাক পালিয়ে যায়। তবে তার প্রধান সহযোগী ওমর ফারুক ও কামরুল ইসলাম ৭ হাজার পিস ইয়াবা সহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। এই ঘটনায়ও র‌্যাব বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায়ও মোস্তাককে আসামী করা হয়। এভাবে ইয়াবা ব্যবসার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় মোস্তাকের বিরুদ্ধে অন্তত ১৩টি মামলা হয়েছে বলে বিশ্বস্থ সুুত্রে জানা গেছে।

এদিকে এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, ইয়াবা ও মানবপাচারকারী মোস্তাকের বিরুদ্ধে অকের পর এক মামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিরোধী তৎপরতার কারনে দীর্ঘ ১বছর যাবৎ আত্মগোপনে চলে যায় সে। কিন্তু তার পরিবর্তে সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশোনা করে থাকেন তার চাচাতো ভাই ছৈয়দ আলম। যখন মোস্তাক আইনি কোন সমস্যা পড়েন তখন জোর তদবির চালান এই ছৈয়দ আলম। এমনকি মোস্তাকের সমস্ত টাকা-পয়সা রয়েছে ছৈয়দ আলমের নিকট। তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা জরুরী বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি। তাছাড়া হলদিয়া ডাকোয়া পাড়া গ্রামের মোজাফফরের ছেলে ছুরত আলম ও রবি আলম দু,ভাই মোস্তাক গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর