আর মাত্র কয়েকটি দিন। তারপরেই মুসলিম স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ঈদকে ঘিরে নিরাপত্তায় বরিশালে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েকদিন ধরেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েছে। গতকাল সোমবার নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কেই মহড়া দেয় বিএমপি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে অপরাধী চক্র। মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী চক্র, মলম বাহিনী রয়েছে এই তালিকায়। গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, ছিনতাইকারীদের নেতৃত্বে থাকা অর্ধশতাধিক অপরাধীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকায় পুরানোদের পাশাপাশি নতুন কিছু নাম উঠে এসেছে।
পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বরিশাল ও আশেপাশের বেশ কয়েকটি চক্র রয়েছে যারা বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে লোকসমাগম বেশি হয় এমন এলাকা যেমন ল ঘাট, রুপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদেরকে ঈদ সার্ভিস শুরু হওয়ার আগেই আটকের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে কোন চক্র বরিশালে যেন আসতে না পারে সেজন্য পুলিশি তৎপরতা চলছে। বিশেষ করে ঈদ বাজারকে ঘিরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকান্ড গত কয়েক বছরের থেকে বেশ দৃশ্যমান রয়েছে। যদিও যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। পার্কিংবিহীন বাজার ব্যবস্থাপনায় যানজট নিরসনের লক্ষে সড়কের পাশে যানবাহন কোনভাবেই থাকতে দিচ্ছে না তারা। যদিও ওইসব গাড়ির জন্য সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নগরের মূল ব্যবসায়ীক এলাকাগুলোতে ঈদ উপলক্ষে পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এছাড়াও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, নির্বিঘ্নে ঈদ বাজারে চলাচলের জন্য ফলপট্টি থেকে চকবাজার ও কাটপট্টি রোড যান চলাচল বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে পুলিশ বাহিনী। আবার এসব কাজ মনিটরিং করাসহ আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এমনকি খোদ নগর পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) ও নিজে মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখছেন এসব। এদিকে নৌ-রুট ও সড়ক পথে আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ বরিশালে আসবেন।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুর মতে শুধু নৌ-পথেই বরিশালে ১২ লাখের মতো মানুষ আসবেন আর গোটা দক্ষিনা লের হিসেবটা এর কয়েকগুন। এই বৃহৎ সংখ্যক ঘরে ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বরিশালের প্রশাসন ইতিমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি এরইমধ্যে মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী চক্র, অজ্ঞান পার্টি, প্রতারকসহ দুস্কৃতিকারীদের রুখতে কৌশলী ফন্দি এটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারমধ্য দিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে ঈদকে ঘিরে মাথাচারা দিয়ে ওঠা অপরাধীদের। বরিশাল সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল¬াহ আল মামুন জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ফোর্স প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। যদিও এখনো ফোর্স পাইনি; তবে নিয়মিত নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আমরা কাজ করছি। নৌ-পথে মাদক যেন বরিশালে ঢুকতে না পারে, ছিনতাইকারী চক্র বা মলম বাহিনী যেন সক্রিয় হয়ে না উঠতে পারে সেজন্য নৌ-পুলিশের অভিযান আগে থেকেই চলমান রয়েছে।
অপরদিকে ঈদ ও ঈদ বাজারকে ঘিরে বাড়তি মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরইমধ্যে নগরের রুপাতলী ও নথুল্লাবাদ এলাকায় গুরুত্বপূর্ন দুটি বাস টার্মিনাল ও নদী বন্দরকে ঘিরে র্যাব তাদের কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারী কমিশনার নাছির উদ্দিন মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশের সবগুলো ইউনিট একসাথে কাজ করছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টিম দায়িত্ব পালন করছে। শপিংমল, ব্যবসা প্রধান এলাকাসহ নগরের অলি-গলিতে আমাদের সদস্যরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। আশাকরি বরিশালবাসী নির্বিঘ্নে ঈদ কাটাতে পারবে, কোন অপ্রতিকীর ঘটনা ঘটবে না। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান জানিয়েছেন, আমরা ইতিমধ্যে সমন্বয় সভা করেছি। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার ঘরমুখো মানুষকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পারবো।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।