ব্যাপক পরিবর্তন আসছে রেলের টিকিট বিক্রিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: রবিবার ১৪ই এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৮ অপরাহ্ন
ব্যাপক পরিবর্তন আসছে রেলের টিকিট বিক্রিতে

রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে প্রথম যাত্রীসেবার মান বাড়ানোসহ রেলপথের উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে পরিবর্তন আসছে রেলের টিকিট বিক্রির পদ্ধতিতে। জানা গেছে, রেলের টিকিট ক্রয়ে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ট্রেনে এটি চালু হলেও ঈদের আগে এ পদ্ধতি সব ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে বাধ্যতামূলক করা হবে। এছাড়া কমলাপুর স্টেশন ছাড়াও আরও কয়েকটি স্পটে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা ভাবছে রেল বিভাগ। পাশাপাশি যাত্রীরা যেন সহজেই টিকিট পান সেজন্য চালু হচ্ছে রেলওয়ে অ্যাপস।

চলতি মাসেই অ্যাপস চালু
রেলের টিকিট কাটাসহ ঝামেলা মুক্ত সেবা দিতে চলতি মাসেই চালু হচ্ছে রেলওয়ে অ্যাপস। এর মাধ্যমে একজন যাত্রী শুধু টিকিটই নয় রেলের আসনগুলো কেমন হবে এবং কোন দূরত্বের ভাড়া কত, তা জানতে পারবেন। জানা যাবে ট্রেনের বর্তমান অবস্থানও। যাত্রা শেষে যাত্রীরা সেবার মান সম্পর্কেও রেটিং দিতে পারবেন। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের লিস্ট থেকে জানা যাবে কোন ট্রেন কোথায় যাবে। ভিসা, মাস্টার কার্ড, বিকাশ জাতীয় ওয়ালেটের মাধ্যেমে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করা যাবে।জানা গেছে, রেলের সেবা আধুনিকায়ন করতে সম্প্রতি রেল ভবনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রেলওয়ে-সিএনএস কর্মকর্তা ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী পলক অ্যাপস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ভ্রমণ পথে সিটে বসে খাবারের অর্ডার এবং নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি দেয়া যায় এমন ই-কমার্স কেন্দ্রীক একটি সেবামূলক ফিচার যুক্ত করার পরামর্শ দেন। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও প্রতিমন্ত্রীর এমন ফিচারের পরামর্শ অ্যাপসে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ই-কমার্স কেন্দ্রীক ফিচারের বিষয়ে উদাহরণ টেনে জানানো হয়, একটি ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বগুড়া হয়ে ঢাকায় আসছে। তখন একজন যাত্রী ইচ্ছা করলে বগুড়ার দই কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী যাত্রী অনলাইনে অর্ডার করলে ডেলিভারি ম্যান সঠিক সময়ে স্টেশনে এসে যাত্রীর সিটে সেটি পৌঁছে দেবে।

অপরদিকে, আগে ট্রেনের মোট টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হতো কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। পাঁচ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও বাকি পাঁচ শতাংশ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকতো। রেলওয়ে অ্যাপসটি চালু হলে সিংহ ভাগ টিকিটই দেয়া হবে অ্যাপসে। যেসব যাত্রী অ্যাপসের মাধ্যেমে টিকিট কাটতে চান না তাদের জন্য কাউন্টার থেকে টিকিট দেয়া হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রেলের অগ্রিম টিকিট
ঈদে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন রাজধানীবাসী। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট সংগ্রহে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে জনস্রোতে পরিণত হয় কমলাপুর রেল স্টেশন। তবে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পান না। আবার অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে হিমশিম খান স্টেশন কর্তৃপক্ষও। তাই এবার ঈদের টিকিট রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে অন্যবারের মতো এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে যাত্রীদের কমলাপুরে ভিড় করতে হবে না। যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই টিকিট সংগ্রক করতে পারবেন।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদে অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীরা কমলাপুরে ভিড় করায় খুবই ভোগান্তি হয়। তাই এবার কমলাপুরের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটা হতে পারে রেলভবন, টিএসসি, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। আশা করা যায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনগণ রেলের সর্বোচ্চ সেবা পাবেন।

সব ট্রেনের টিকিট সংগ্রহে লাগবে এনআইডি
১৫ এপ্রিল থেকে আরও ১২টি ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ১৬টি ট্রেনের টিকিট কাটতে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন নম্বর লাগবে। বাকি ট্রেনগুলোতেও ন্যাশনাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে টিকিট ক্রয়ের ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ঈদের আগেই এটি সব ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিচ্ছে রেলওয়ে। ফলে টিকিট কালোবাজারির সুযোগ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট ক্রয়ের সুযোগ থাকবে। তবে এ বিষয়ে আরও প্রযুক্তিগতভাবে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তা গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

এদিকে আগামীকাল সোমবার (১৫ এপ্রিল) হতে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি, সুন্দরবন, একতা, নীলসাগর, রংপুর, সীমান্ত, উপবন, উদয়ন, হাওর, তিস্তা, অগ্নিবীনা এক্সপ্রেসে ভ্রমণ ইচ্ছুক যাত্রীদের টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে ওয়েবসাইট, ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট, রেলওয়ের মোবাইল অ্যাপস ও স্টেশন কাউন্টারে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধনসহ নাম রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেল ভ্রমণের ক্ষেত্রে মূল টিকিট প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। টিকিটের কোনো ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না।

ই-টিকিটের ক্ষেত্রে নিজস্ব আইডিতে সংগৃহীত টিকিটের প্রিন্ট ও ফটো আইডি প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। অপরের আইডিতে ক্রয় করা টিকিটের ক্ষেত্রে রেল ছাড়ার পূর্বে স্টেশন থেকে মূল টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ফোনের এসএমএস প্রদর্শন করে ট্রেন ভ্রমণ করা যাবে না।

ইনিউজ ৭১/এম.আর