কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে: নুসরাতের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১১ই এপ্রিল ২০১৯ ০৫:১৬ অপরাহ্ন
কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে: নুসরাতের বাবা

‘আমার একমাত্র মেয়ে নুসরাত। সেদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। আর ওই সময়ই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমার ভেতরে কী চলছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মেয়ে হারানোর বেদনায় কলিজায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।’ আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে এভাবেই কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাতের বাবা কে এম মুসা। নুসরাতের বাবা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের কারণে আমার মেয়ের এই পরিণতির কথা সবাই জানতে পেরেছে।’ এই কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন কে এম মুসা।

নুসরাতের বাবা কে এম মুসা আরো বলেন, ‘সেই দিন আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেই দিনই আমার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী বলব জানি না। আমাদের ভেতরে যে কী চলছে, তা আমি বোঝাতে পারছি না। আমার কলিজায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।’ দোষীদের বিচার দাবি করে নুসরাতের বাবা বলেন, ‘এরই মধ্যে আমার মেয়ের বিষয়ে সবকিছুই প্রকাশিত হয়েছে। আমার দাবি, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেন সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হয়।’ পোড়া শরীর নিয়ে টানা পাঁচদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল বুধবার রাতে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন নুসরাত। আজ ময়নাতদন্তের পর তাঁর মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।  

নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসা মানিকের মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করেন। নুসরাতকে গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব