
প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার শতাব্দী প্রাচীন হেমনগর জমিদার বাড়ীর এখন বেহাল দশা। এ প্রাচীন পুরাকীর্তি যথাযথভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায়, এখন ভূইফোড় এক আওয়ামীলীগ নেতার গরুর খামারে পরিণত হয়েছে।
সাবেক অধ্যক্ষের সেই সুবিধা লোটার গন্ধে, মাছির মতো ভন ভন করে ছুটে আসেন, সরকারি দলের নেতা মাহবুব হাসান টুটুল। তিনি হেমনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার।এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাবেক সাংসদ এবং কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি খন্দকার আসাদুজ্জামানকে ভুল বুঝিয়ে, অথবা কোনভাবে সুবিধা প্রাপ্তি ঘটিয়ে, গভর্নিংবডির রেজুলেশন ছাড়াই দুই নম্বরীতে পুকুরটি লীজ নেন। আর সেই অবৈধ লীজের ছুঁতায় টুটুলের অনুপ্রবেশ ঘটে রাজবাড়ীতে। এরপর রাজত্ব স্থাপন। সম্রাটগিরি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম জানান, টুটুল মেম্বার এ অবৈধ গরুর খামার পরিচালনার জন্য কলেজের মিটার থেকে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। কলেজকে এজন্য প্রতিমাসে, ৮/১০ হাজার টাকা বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। সাবেক অধ্যক্ষ বীরেন চন্দ্র গোপের সাথে, টুটুলের অবৈধ লেনদেন থাকায়, বছরের পর বছর, কলেজকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের ধকল, টানতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৬ জানুয়ারী টুটুলকে বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে নেয়ার চিঠি দেন। কিন্তু টুটুল সেটি আমলে নেয়নি। কলেজের চিঠিপত্র ঘেটে দেখা যায়, টুটুল গত ২২ ফেব্রুয়ারী, কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি এবং সাবেক সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামানের নিকট এক দরখাস্তে, বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত এবং কলেজ ক্যাম্পাসে গরুর খামার অনির্দিষ্টকাল পরিচালনার অনুমতি চান। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সাবেক সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামান বিনাশর্তে দরখাস্ত মঞ্জুর এবং কলেজের বিদ্যুতে গরুর খামার পরিচালনার অনুমতি দেন।

এ ব্যাপারে টুটুলের বক্তব্য, তিনি মাছ ও গরুর খামারের জন্য, কলেজের মিটার থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। প্রতি মাসে ব্যবহৃত বিদ্যুতের টাকা, কলেজ অধ্যক্ষ বীরেন চন্দ্র গোপের নিকট জমা দিয়েছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, টুটুল বিদ্যুৎ বিল বাবদ কানাকড়ি ও কলেজকে দেননি। কলেজের ক্যাশ বইয়ে, ওই টাকার কোন হিসাব নেই। টুটুলের বক্তব্য তিনি সাবেক অধ্যক্ষ বীরেন চন্দ্র গোপের নিকট কলেজের রশিদ মূলে বিলের টাকা পরিশোধ করেছেন। কলেজের ক্যাশ বইয়ে হিসাব না থাকলে সেটির দায়দায়িত্ব সাবেক অধ্যক্ষের। তিনি খামারের নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ীর উত্তরাংশের প্রাচীর ভেঙে নতুন গেট চালু করেছেন। এটি ভাঙতে পারেন কীনা প্রশ্নে বলেন, স্থানীয় সাংসদের মৌখিক অনুমতিতে সেটি করেছেন।
গত ১ এপ্রিল হতে শুরু হয়েছে কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা। শতশত পরীক্ষার্থী এবং সাথে আসা আত্মীয়স্বজরা, রাজবাড়ীর বিস্তীর্ন চত্বরে ভিড় জমান। কিন্তু খামারের গবাদিপশু রাজবাড়ী দাপিয়ে বেড়ানোয় কলেজ ক্যাম্পাসসহ সর্বত্র নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। ক্যাম্পাসের এমন অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশেই চলছে পরীক্ষা। ফলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসব দেখে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন। কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক ও কষ্টদায়ক। সামান্য বিবেকবোধ বা লজ্জা থাকলে কোনো মানুষ কলেজ ক্যাম্পাস বা ঐতিহাসিক স্থাপনায়, এমন ব্যবসা করতে পারেন না। উপজেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর